১৪ই আগষ্ট ২০১৭ বিকালে আমি আর কবি মইজ গেছিলাম পটুয়াখালীর পাঙাশিয়া ইউনিয়নে। কবি মইজের সময়ের খুব দাম তাই তেনার লগে কোনখানে যাইতে পারাটা ভাগ্য। যাইহোক অইখান থিকা আসার পথে সন্ধ্যায় লেবুখালী ফেরিঘাটের এপার নামলাম(মন্ত্রী ওবায়েদুল কাদের বাকেরগঞ্জ উপজেলার যেইখানে আগে আইসা গেছিলো ২০১৭ তে) । অইখানে দাঁড়াইয়া দেখি ৩টা চায়নিজ। ২টা মেয়ে আর ১টা ছেলে। মেয়ে দুইটা বেশ সুন্দরী।
আমার একটারে বেশ পছন্দ হইছিলো! ওঁরা ফলের দোকানে কমলালেবু কিনতেছিলো। আমি আর কবি মইজ দাঁড়াইয়া গেলাম চায়নিজদের কথার শোনার আগ্রহে। ওরা চিংচিংপং না কি যেন কইতাছিলো নিজেরা নিজেরা। যেহেতু চায়নিজ ল্যাংগুয়েজ কিছু বুঝি না তাই হাসি পাইতেছিলো খুব! আমি আর কবি মইজ যেহেতু দুইটা বাঙাল সেহেতু “চিংচিংপং, অংচিংপংপং” ইত্যাদি কইয়া হাসতেছিলাম। ওঁরা আমাগো দিক ফিরাও চাইলো না। আমি কবি মইজরে বললাম, “ব্যাটা অংচিংপং যে কও, আইসা যদি কারাতি দিয়া নাক বোঁচা কইরা দেয়? এমনিতেই চায়নিজরা বেশ কুংফু পারদর্শী! ” মহিবুল কিছু না কইয়া হাসতেছিলো।
চায়নিজরা খুব ভালো দরাদরি করতে জানে। কমলা লেবু খুব দরদরি কইরা কিইনা সামনের দোকানে গেলো কলা কিনতে। পিছন থিকা কিছু লোক তখন ওগো অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করতেছিলো। আর সেক্সুয়াল হ্যারেসমেন্ট তো আছেই। আমরা ও আগ্রহ নিয়া পিছন পিছন গেলাম। আমরা অন্য দোকানে দাঁড়াইয়া কিছু কিনতেছিলাম, পাশাপাশি চায়নিজগো দেখতেছিলাম। ওঁরা সাগর কলার দাম জিজ্ঞাস করলো চায়নিজ ভাষায়। দোকানদার কিছুই বুঝলনা। চায়নিজগো হেল্প করতে এক লোক আগায়া আসলো সম্ভবত লোকটা অটো ড্রাইভার। চায়নিজরা হাত দিয়া কলা দেখায়া দিয়া দাম জিজ্ঞাস করতাছিলো তখনো। অটোঅলা ছোটবেলার আদর্শ লিপির মত একটু আধটু ইংলিশ জানে। সে সেইটা জাহির করতে আসছে সম্ভবত। অটো ড্রাইভার সামনে আইসা জিজ্ঞাস করলো,
“কি নিবেন?” ওঁরা হয়তো বুঝতে পারছে অই লোকটার কথা। তাই হাত দিয়া কলা দেখায়া দিলো। আর ওগো ভাষায় পার পিস প্রাইস জানতে চাইলো। অটো ড্রাইভার কইলো “টেন মানি টেন মানি”। তারপর হাত দিয়া দেখাইয়া দিলো দশ টাকা পারপিস। বাঙালী হইলে পারপিস কলার দাম পাঁচ টাকার বেশি একটা টাকাও দিতো না। যেহেতু বিদাশী তাই ডবল চাওয়া হইছে। ঐখানে থাকা একটা চায়নিজ মেয়ে কইলো,
“নো নো এইট মানি! এইট মানি!” তারপর বুঝাইতে চেষ্টা করলো দামটা একটু বেশিই চাওয়া হইছে। অটোঅলা দোকানীর দিকে চাইয়া কইলো,আট টাকার বেশি দিবে না। দোকানী রাজী হইলে অটোঅলা চায়নিজদের দিকে তাকায়া কইলো,
“ওকে ওকে!”
চায়নিজরা কয় হালি কলা নিলো অতটা খেয়াল করিনি। টাকা পেইড কইরা ওঁরা সম্ভবত থ্যাংকস দিছে নিজেগো ভাষায়, নতুবা বলছে টাকা ঠিকাছে কিনা। অটোঅলা হঠাৎ কইরা উইঠা কইলো কি,
“ওকে ওকে চোদে চোদে চোদে!”
আমরা দুইজন এইপাশে ছিলাম, খটখট কইরা হাইসা উঠলাম, হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাইতে লাগলাম। যেহেতু আমরা বাঙাল সেহেতু আমি আর মহিবুল কোন শরম না নিয়াই হাসতেছিলাম। আমাগো হাসি দেইখা পাশের সবাই হাসতে লাগলো। পুরুষ চায়নিজটা আমাগো দিকে তাকাইয়া ছিলো। বোধকরি শালায় বুঝতে পরছে। আমি মনে মনে কইলাম “বুঝলে তুই বোঝ শালা, কেন বাংলা শিইখা আসোসনায়”? চায়নিজগুলা তারপর অতিদ্রুত চইলা গেলো, আমরাও আইসা পরলাম। সারা রাস্তা এই নিয়া বেশ হাসাহাসি করছি দুইজন। অন্তত তিনদিন মন খুইলা হাসার একটা টপিক পাইছি তো!
আব্বার কওয়া একটা ক্ষুদ্র গল্পের কথা ও মনে পইরা গেলো। ঘটনাটা ৬৩ সাল বা তার আগের হবে। আমাগো পাশের ইউনিয়ন শিবপুর “সেন্ট আল ফ্রেডস হাইস্কুল” অইখানে একটা গির্জায় ইতালি থিকা একজন ফাদার আসছিলো। আব্বা কি যেন নামটা বলছিলেন মনে নাই। যেহেতু মিশনারি স্কুল এবং ইতালির খ্রীস্টানগো সাহায্যে গড়া স্কুল তাই গীর্জার ইতালি ফাদার আবার স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির লগেও জড়িত থাকতো। আমার আব্বা তখন অই স্কুলেরই ছাত্র। স্কুলের পাশে খোলা জায়গায় বাগান করার কাজ চলছিলো তখন একজন বাঙালীর তত্ত্বাবধানে। মাঝে মাঝেই গীর্জার ফাদার সেইখানে কাজ দেখতে যাইতো। একদিন একটা শ্রমিক অই বাগানে কাজ করতেছিলো। তখন অই ফাদার হুট কইরা বাগানে ঢুইকা গিয়া জিজ্ঞাস করলো,
“শালোম(শ্রমিকের নাম শাহআলম) খাজ কেমোন চলছে?”
তখন শাহআলম কাজ কইরা খুব বিরক্ত!বিরক্তি মনে রাইখা মুখে হাসি রাইখা বললো “গুড গুড চুদির পুত!” ফাদার যেহেতু গালিগালাজ শিখেনাই তাই সে বেশ অবাক হইলো।আশ্চর্যবোধ নিয়াই আওড়াইলো “চুদির পুত! হোয়্যাট ইজ দিজ?” শ্রমিক বেশ ভয় পাইলো এই ভাইবা যে, উনি যদি কোনমতে চুদিরপো’র অর্থ জাইনাই যায় তাইলে তো অই শ্রমিকের খবর আছে! ফাদার খালি কইতেছিলো “হোয়্যাট মিইনিং ছুডির পুত? এক্সপ্লেইন ইট….!” এর মধ্যে অইখানের সর্দার আইসা পরলো। সর্দার আসতেই ফাদার প্রশ্ন ছুইড়া দিলো “লুটফার(সর্দারের নাম লুৎফার) হোয়্যাট ইজ চুদিরপুত? এক্সপ্লেইন ইট প্লিজ!” সর্দার দেখলো এইটার অর্থ কইলে শ্রমিকের চাকুরী শেষ তাই সে মিথ্যার আশ্রয় নিলো শ্রমিকের মুখপানে চাইয়া। সে কইলো,
“স্যার! হি ওয়ার্কেড হার্ড অ্যান্ড ‘চুদিরপুত’ ইজ অ্যান অ্যাডমিরাবল ওয়ার্ড! ইটস মিইন অ্যা গুড ম্যান!”
“হাউ ফানি! ইউ সেইড ইট! দেন উই আর ট্রেডিশনাল “চুদিরপুত!” মাই গ্রান্ডপা ওয়াজ বিগ চুদিরপুত! দেন মাই ফাদার, দেন মি অ্যান্ড মাই ব্রাদার্স আলবার্ট, জিসবার্ড, চার্লসবার্ড! চুদিরপুত ইজ আওয়ার প্লান্টজিনেট টাইটেল! ”
এরপর থিকা নাকি যারাই ভালোকাজ করতো তাগো উনি
“গুড ওয়ার্কার চুদিরপুত” বইলা প্রশংসা করতেন।
যাইহোক, রাস্তার গালাগালি, আমাগো দুইজনের হাসাহাসি, অশ্লীল বক্তব্য ছোড়া, অটোঅলার শেষ বাক্য কিংবা দোকানদারের বেশি দাম চাওয়া সবগুলা আমাগো চরিত। এইটা নিয়া আমি ভাবি কিন্তু আমাগো বাঙালের চরিত্রের উপর আমার কোন ঘৃণা বা ক্ষোভ নাই। এইটাই আমাগো চরিত্র। আপনিও বা কি আমিও বা কি সবাই এইরকম কিছুটা হইলেও। রাস্তায় দাঁড়ায়া আপনে অন্য ভাষাভাষী আগ্রহ নিয়া দেখবেন। ভাষা অংচিংপং হইলে হাসবেনই। সরাসরি না হইলেও মনে মনে। অন্তত অটোঅলার শেষ কথা “চোদে চোদে চোদে” সেইটাই প্রমাণ দিছে যে, আমি বাঙালী! আমি তোমাগো ক্যাটেগরি ছাইড়া যাইতে পারি? তাঁর কিন্তু আমাগো হাসাইনার কোন ইচ্ছা আমি দেখিনায়, আমি স্পষ্ট দেখছি উনি বুঝাইতে চাইছেন যে, আমি তোমাগো থিকা ভিন্ন না। আমিও তোমাগো মতনই!
(১৪ই আগষ্ট ২০১৭ ইং)
No comments:
Post a Comment