ইউসুফ বান্না ভাই ছবি: রাশপ্রিন্ট |
বছরের পর বছর আমি বহু সাংবাদিক, লেখক, বহু কবি, বহু কিছু দেখছি কিন্তু আমার ২২বছরের লাইফে জ্ঞান হওয়ার পর একজন ইউসুফ বান্না ভাই কখনো দেখিনি। তিনি আমার কাছে আহমদ ছফার মতোন। যাঁর কোন স্বার্থ নাই সাহিত্য করায়। বিনাস্বার্থে তিনি সাহিত্য করেন। কবিতা লিখেন, ছবি আঁকেন। আর ভালোবাসেন ঐ ছবিগুলো মানুষরে দেখাইতে। শো-অফ বইলা কিছু তাঁর মধ্যে নাই। তবে সম্ভবত ছবি আঁইকা বিক্রি করতে পারেন আমার জানা নাই অত। বান্না ভাইরে আপনার মনে হবে যে 'ক্রেজি পার্সন।' আপনি ভাবতেও থাকবেন এমনই। কিন্তু তাঁর মতো পিস বেশি একটা আমাগো বাঙলা সাহিত্যের অঙ্গনে দেখা যায় না। বান্না ভাই এমন যে, আপনারে শিখাইবো খুব গোপনে আপন কইরা। আর আপনার মধ্যে নিঃস্বার্থ গাঁইথা দিবে ভালোবাসার বীজ যা আপনারে তাঁর প্রতি আকৃষ্ট কইরা ফেলবে।
আমাগো সাহিত্যাঙ্গনের উপর তলায় যারা থাকে ওরা সব শালারা হইলো মাদারফাকার! একেবারে স্বজনপ্রীতিতে ভরা রাজনৈতিক নেতাগো মতোন এই বাইঞ্চোদগুলা। আপনারে চিনে তো কাম হইছে, আপনারেই প্রোমোট করবে। চিনে না তো আপনি তাগো কাছে গেলে এমন ভাব ধইরা থাকবে যে তাঁরা শিরু খাঁ আর আপনি তাগো ভৃত্য! বেশ্যার দালালগুলা মেয়েদের ক্ষেত্রে আবার সম্পূর্ণ ভিন্ন। সুন্দরী হইলে কোন কথাই নাই!
বান্না ভাই উপর তলার কিনা জানি না, তবে তিনি উপর তলার হইলেও তিনি এ মাদারফাকারগো থিকা সম্পূর্ণ ভিন্ন। আমারে যদি কেউ জিগায়, তোমার এই পৃথিবীতে অচেনা লোক এমন কারে ভালো লাগছে? আমি নিঃসংকোচে কমু 'সে ইউসুফ বান্না ভাই।' আমি সিনিয়রদের মধ্যে এই একটা মানুষরেই সম্মান করি। তাঁর সাথে আমার মাত্র একদিন কথা হইছে, কোনদিন দেখাও হয়নি বা তিনি আমার জন্য কোথাও সুপারিশ করছেন তাও না। একজন ভালো মানুষরে চিনতে বেশি সময় মূলত লাগে না। আমার পক্ষে একদিনেই সম্ভব হইছে এইটা।
হঠাৎ একদিন আমি আমার চরিত্রগত ভাবে ধুমচে ফ্রেন্ডরিকুয়েস্ট পাঠাইতেছি এর মধ্যে বান্না ভাই ও ছিলেন। তাঁর কাছে ফ্রেন্ডরিকুয়েস্ট চইলা গেছে। তিনি প্রথমে আমার টাইমলাইনটা ভালো কইরা চষলেন। আমার একটা কবিতা এই কবিতাটা তাঁর ভালো লাগছিলো
'সিগারেট আমারে খাইতে থাকলে একবার কইলাম; এইবার থামো!
সবই যদি খাও একবারে
খাইতে পারবানা আর কখনো।'
তিনি আমারে ইনবক্স করলেন নিজ থিকা। জানাইলো কবিতাটা ভালো লাগছে। এরপর তিনি আমারে কইলো, রিলেকরে চিনো? আমি তখন কোন বাল ও চিনি না। না কোন বাল ও জানি। এখনো যে অনেক কিছু জানি, চিনি তাও না। তখন আরো চিনতাম না। আমি সোজাসুজিভাবে কইলাম, না। তিনি আমারে কইলেন, মারিয়া রিলেকের কাছে তাঁর ভক্তের চিঠিগুলো পড়ছো? আমি কইলাম, না ভাই। তিনি আমারে রিলেকের ঐ চিঠি যোগাড় কইরা দিলেন। আমি তাঁরে জোগাড় কইরা দিতে বলছিলাম কিনা মনে নাই।
আমি ভাবতেছিলাম- 'লোকটার মধ্যে ক্রেজিনেস আছে সম্ভবত! নতুবা চিনে না, জানে না তিনি কেন আমারে এইসব জোগান দিতেছে?'
তিনি আমার সাথে এমন কইরা কথা কইতে ছিলো যেন আমার লগে তাঁর লগে অনেক আগ থিকা পরিচয়। ফোন নম্বরটা দিয়া কইলো, ঢাকায় আসলে যোগাযোগ কইরো। মনে হইতেছিলো চেনাজানা অনেক আগের।
তখন আমার প্রোফাইলে সিগারেট মুখে একটা ছবি ছিলো, তিনি আমারে ঐটা নিয়া বললেন, বললেন ঐসব ব্যাকডেটেড। আমি খুব মাইন্ড করছিলাম অবশ্য এবং বলছিলাম, নিজরে মার্কেটে উঠাইতে ঐসব করতেছি। তিনি কইলেন, তুমি মার্কেটে উঠলে এমনেই উঠবা। আমার কেমন যেন গুরুগিরি মনে হইলো ব্যাপারটা। আমি তাঁর ঐকথাটা পাত্তা দিলাম না।
আমার মুখের অবস্থা তো জানাই সবার। আমি আমার মতো তাঁর লগে 'বালবোল' আকথা কুকথা সবই কইলাম, মজার ব্যাপার এই মানুষটা একটুও মাইন্ড করতেছে না অথচ সে আমার বয়সে কমসেকম ১৫-২০ বছরের বড় তো হবেই!
খু্ব স্বাভাবিক চেনাজানা মানুষের মতো তিনি আমার লগে কথা কইতেছিলেন মনে হইতেছিলো আমরা দুই বন্ধু। এই বিষয়টা আমারে ভিতর থিকা ইন্সপায়ার্ড করছে! সবচেয়ে বেশি ইন্সপায়ার্ড হইছি, তাঁর অহংকার শূণ্য মনুষ্যেত্ব দেইখা। এত জানাশুনা, এত বড় মাপের একজন কবি অথচ সামান্য অহংবোধ নাই নিজের মধ্যে।
তাঁর সাথে আমার অনেক কথা হইলো। আর্ট নিয়াও কথা হইলো, কথা হইলো সাহিত্য, রাইসু, মজহার ইত্যাদি নিয়াও।
একপর্যায়ে তিনি কইলেন, তাঁর প্রেমিকারা কল দিতেছে। তিনি কল ধইরা আইসা ফের আমারে আরো অনেক বই জোগাড় কইরা দিলেন। যেমন, কবিতার ক্লাশ, কবিতা কী, বাংলাদেশের ইতিহাস, সৈয়দ শামসুল হক এর একটা বই এবং কবি নির্মলেন্দু গুণ এর কয়েকটা বই। বই জোগান দিয়া কইলেন সেইগুলা পড়তে।
ঐই শেষকথা। আমিও তাঁরে আর নক করিনাই, তিনিও না।
আমি বইগুলা সংগ্রহে রাখি ঠিকই কিন্তু তখন আর পড়িনাই। বাল পড়মু? তখন পড়ার প্রতি অত আমার আগ্রহ নাই। এইভাবে চইলা গেলো একটা বছর। একবছর পর আমি যখন বইগুলারে পড়তে নিলাম, তখনই মনে হইলো, এই লোক তো আমারে নিজের স্বার্থে কিছু দেননি! এই লোক তো আমার ভিতর থিকা ভালো কিছু বাইর করতে এইসব সাজেস্ট করছেন একেবারে বিনাস্বার্থে!
আমি ভাবতেছিলাম, কেমনে এইরকম একজন কবি হইতে পারেন? আমাগো সিনিয়র কবিরা তো চায় না তাগো থিকা কেউ একজন ভালো লিখুক। চায় না কেউ একজন তাঁরা চইলা যাওয়ার পর তাগো স্থান দখল করুক। কেউই চায় না। তাঁরা কোন লেখক তৈরী কইরা যায় না। আমি বান্না ভাইয়ের মধ্যে নিঃস্বার্থ যে রূপটা দেখছি,।এইরকম নিঃস্বার্থ মানুষ ছিলেন আমাগো আহমদ ছফা। যিনি তরুণ লেখকগো সবসময় নিজের পাখনার তলায় রাখছেন। লেখক তৈরী করছেন। এমন হইছে যে তিনি নিজ দায়িত্বে তরুণ মেধাবী লেখকগো লেখা ছাপাইতে প্রকাশকদের দুয়ারে দুয়ারে গেছেন! জনপ্রিয় লেখক হুমায়ুন আহমেদ এর প্রথম উপন্যাস তিনিই পাবলিশ করায়ে দেন। বান্না ভাইও এমন। হয়তো কারো বই পাবলিশ না করুক, কিন্তু বাংলা সাহিত্যে মেধাবী লেখক আসুক এইটা তিনি মনেপ্রাণে চান। বান্না ভাইরে বেশি কেউ একজন চিনবে না। বাংলাদেশের স্বজনপ্রীতিময় সাহিত্য পরিবারে মেধাবী এই মানুষটা বিখ্যাত বা প্রতিষ্ঠিত না। না তাঁর সম্বন্ধে কেউ একটা বেশি জানবে। কারণ তিনি নিজ থিকা কাউরে দেখাইতে যান না। শো-অফ জিনিসটা তাঁর মধ্যে নাই। লুকায়ে লুকায়ে থাকেন তিনি।
কিন্তু সমস্যা হইলো, ভালো মানুষরা লুকায়ে থাকতে পারে না। পৃথিবী তাগো বিভিন্নভাবে মানুষের সামনে হাজির করে। আর তাঁরা সিক্ত হয় মানুষের প্রকৃত ভালোবাসায়। অবিরাম ভালোবাসা ইউসুফ বান্না ভাইয়ের প্রতি।
No comments:
Post a Comment