Saturday, November 17, 2018

মঙ্গোল শোভাযাত্রা নিয়া মুসলমানরে অপবাদ দিতাছেন আপনে?


এই যে মঙ্গোল শোভাযাত্রা হইবে এইটা নিয়া চুপই ছিলাম চারুকলার বন্ধুগো খাতিরে।এই যে তাঁরা রাক্ষস টাক্ষস নিয়া লাফাইবে তাও তাগো খাতিরে সাম্প্রদায়িকতা ধরিনায় কিন্তু এখন চুপ থাকনতো গেলোনা।মঙ্গোলে গোল করেন না মনা করছে কে আপনাগো? কিন্তু এইটারে শ্রেফ পুরানা বাংগালী সংস্কৃতি বানাইতেই হবে? যান বানান মানা করছে কে? কিন্তু এইটার দোহাই দিয়া আপানে বাংগালী মুসলমানরে সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদী,বাংলা সংস্কৃতি বিরোধী ইত্যাদি বলনের আপনারা কে?
মঙ্গোল শোভাযাত্রা বাংলাদেশীগো পালনের জিনিস হইলো কবে থেইক্কা? বাংলাদেশীরা প্যাগান সভ্যতা ছাড়ছেন সেই কবে। পূর্ববঙ্গের কোন প্রাচীন ইতিহাসে এর উল্লেখ নাই তবুও এইটা হইয়া গেলো বাংগালীর প্রাচীনতম উৎসব!




বাংগালী মুসলমানদের যেহেতু সাম্প্রদায়িক বলা হইলো সেহেতু সত্য তো বলতেই হয়, 'এই উৎসবে সাম্প্রদায়িকতার ছোঁয়া আছে'!ঐযে রাক্ষস টাক্ষস ঐসব হিন্দুধর্ম থেইক্কা ধার করা হইছে।আর এইটায় সাম্প্রদায়িকতার ছাপ চাক্ষুষ দেখা যাইতেছে সেহেতু এইটারে বড়জোর হিন্দু বহুল পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুদের উৎসব হিসাবে খাটান যাইতে পারে যেহেতু এইটায় হিন্দুয়ানির ছাপ ১০০% দেখা যায়( যদিও এইটা তাগো আবিষ্কৃত ও না।চারুপীঠ নামের একটি সংগঠনের শামীম আর তাঁর বন্ধুরা সহ ৩০০ শিক্ষার্থী ১৯৮৫ সালে যশোরে প্রথমবারের মতো নববর্ষের উৎসবে পাপেট ও মুখোশ নিয়া বাদ্যাটাদ্য বাজায়া মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করে। এরপর ১৯৮৯ সাল থেকে ঢাকা চারুকলার শিক্ষার্থীরা পহেলা বৈশাখের সকালে মঙ্গোল শোভাযাত্রার আয়োজন করে আসতেছেন।আমি যে সাল হইতে লেখতেছি তার মাত্র ৩২ বছর আগে থেইকা আবিষ্কার হয়।আর নিয়মিত হয় তারও ৪ বছর পর থেইকা ৮৯ সালে)।বৈশাখে পান্তাভাত ইলিশমাছ খাওন রীতির মতো এইটাও হালের নতুন উৎসব।
যদি ধরিই হোলীর মত কইরা এইটারেও পালন করবেন মূর্তি সাজাইয়া "রাক্ষস " কান্ধের উপরে ফালাইয়া প্যাঁপু বাঁশি বাজাইয়া দৌড়াইতে হবে এইটা বাংগালী হিসাবে ফরজ হইয়া দাঁড় করান হইছে, বা সরকার ফরজ করছেন বা উৎসব মানেই করতে হবে বাংগালী হিসাবে ইত্যাদি ইত্যাদি, তাইলে আগেই কইয়া রাখা ভালো এইটা পূর্ববঙ্গে ফরজ করা খাটে না এই উৎসব পশ্চিমবঙ্গের খাটে আমাগো জন্য খালি পহেলা বৈশাখ উৎযাপনই যথেষ্ট।পহেলা বৈশাখের পুরান কোন অনুষ্ঠানে বাংগালী মুসলমান বাগড়া দেয়নায় বা বলেনায় যে এইটা করা যাবেনা। যেই ক্যালেন্ডার দেইখা বৈশাখ উদযাপন করা হয় সেই ক্যালেন্ডারই 'ফতেউল্লাহ সিরাজি' নামের একজন মুসলমান তৈরী করছেন মোঘল সম্রাট আকবরের আমলে।তাই পূর্ব থেইকাই নববর্ষ উদযাপনের লগে মুসলমানরা জড়িত।আসেন বঙ্গাব্দ'র ইতিহাস দেখিঃ

"ভারতবর্ষে মুঘল সম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার পর সম্রাটরা হিজরী পঞ্জিকা অনুসারে কৃষি পণ্যের খাজনা আদায় করত। কিন্তু হিজরি সন চাঁদের উপর নির্ভরশীল হওয়ায় তা কৃষি ফলনের সাথে মিলত না। এতে অসময়ে কৃষকদেরকে খাজনা পরিশোধ করতে বাধ্য করতে হত। খাজনা আদায়ে সুষ্ঠুতা প্রণয়নের লক্ষ্যে মুঘল সম্রাট আকবর বাংলা সনের প্রবর্তন করেন। তিনি মূলত প্রাচীন বর্ষপঞ্জিতে সংস্কার আনার আদেশ দেন। সম্রাটের আদেশ মতে তৎকালীন বাংলার বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও চিন্তাবিদ ফতেহউল্লাহ সিরাজি সৌর সন এবং আরবি হিজরী সনের উপর ভিত্তি করে নতুন বাংলা সনের নিয়ম বিনির্মাণ করেন। ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দের ১০ই মার্চ বা ১১ই মার্চ থেকে বাংলা সন গণনা শুরু হয়। তবে এই গণনা পদ্ধতি কার্যকর করা হয় আকবরের সিংহাসন আরোহণের সময় (৫ই নভেম্বর, ১৫৫৬) থেকে। প্রথমে এই সনের নাম ছিল ফসলি সন, পরে "বঙ্গাব্দ " বা বাংলা বর্ষ নামে পরিচিত হয়।
আকবরের সময়কাল থেকেই পহেলা বৈশাখ উদ্যাপন শুরু হয়। তখন প্রত্যেককে বাংলা চৈত্র মাসের শেষ দিনের মধ্যে সকল খাজনা, মাশুল ও শুল্ক পরিশোধ করতে বাধ্য থাকত। এর পর দিন অর্থাৎ পহেলা বৈশাখে ভূমির মালিকরা নিজ নিজ অঞ্চলের অধিবাসীদেরকে মিষ্টান্ন দ্বারা আপ্যায়ন করতেন। এ উপলক্ষে বিভিন্ন উৎসবের আয়োজন করা হত। এই উৎসবটি একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে পরিণত হয় যার রূপ পরিবর্তন হয়ে বর্তমানে এই পর্যায়ে এসেছে। তখনকার সময় এই দিনের প্রধান ঘটনা ছিল একটি হালখাতা তৈরি করা। হালখাতা বলতে একটি নতুন হিসাব বই বোঝানো হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে হালখাতা হল বাংলা সনের প্রথম দিনে দোকানপাটের হিসাব আনুষ্ঠানিকভাবে হালনাগাদ করার প্রক্রিয়া।"[দ্রঃউইকিপিডিয়া]

তো ইতিহাসের নিরিখে এইটারে হাল বৈশাখ কওন যায়।এরপর বিবর্তন হইতে হইতে আজকের এই পান্তা ইলিশে আসছে।আকবরের আমল থেইক্কাই মুসলমান কেউ বৈশাখ উদযাপন নিয়া টু শব্দ করেনায় বরঞ্চ পালন কইরা আসছে, এই নিয়া মুসলমানদের কেউ সংস্কৃতি বিরোধী কইতে পারেনায় কিন্তু হালের কিছু বুদ্ধিজীবি মঙ্গোল শোভা যাত্রার
 বিরোধীতা করায় মুসলমানদের সংস্কৃতি বিরোধী তো বানাইছেনই লগে মৌলবাদী,সাম্প্রদায়িক ইত্যাদিও বানাইছেন!
 কেন মুসলমানরা এর বিরোধীতা করছেন সেইটা জিগানোর পর্যন্ত কোন বুদ্ধিজীবি বাকি রইলোনা!মূর্তি মুসলমান ধর্মবিরোধী আর মঙ্গোল শোভাযাত্রার মূলই হইলো মূর্তি নিয়া লাফালাফি।মূর্তি বিরোধী মুসলমানরা কিভাবে মূর্তি নিয়া লাফালাফি করবেন? তাগো উপরে জোড় কইরা এই নতুন সংস্কৃতি চাপাইয়া দেওয়াও এক প্রকার সাম্প্রদায়িকতা নয় কি?
 সরকারের মন্ত্রী নূর সাহেব জোড় জবরদস্তি কইরা এইটারে গ্রামগঞ্জ পর্যন্ত পৌঁছাইয়া দিছেন এইটা কি তিনি ঠিক করছেন?
তার উপর এইটা আবার পূর্ববঙ্গে বসবাসরত সংখ্যাগরিষ্ট মুসলামান বাংগালীগো ধর্ম বিরোধী কাজ আর মূলেও তারা এইটার বিরোধী।



বিডিনিউজ২৪ডটকম শিরোনাম করছে
"দেয়ালচিত্রে পোড়া মবিল: ‘বাঙালির শৈল্পিক অনুভূতিতে আঘাত’
ভাই আপনাগো শৈল্পিক অনুভূতি থাকতে পারে আর মানুষের ধর্মীয় অনুভূতি থাকবেনা এইটা কেমন কথা?
আর সেই অনুভূতি থেইক্কা তাঁরা এইটার বিরোধীতা করলেই আপনারা ঝাপাইয়া পরবেন এইটা কেমন কথা হইলো? নিজেগো বেলায় ১৬ আনা পরের বেলায় ৪!
আপনারা মাত্র ২৮ বছর আগের উৎসব দিয়া বাংগালী মুসলমানরে ঐতিহ্য সংস্কৃতি বিরোধী বলতে আসছেন অথচ বাংলাদেশের সংস্কৃতি আর বাংলাভাষাটা রক্ষা করছেনই পূর্ব বঙ্গের মুসলমারা,হিন্দুদের কোন অবদান থাকলেও সেইটা পূর্ববঙ্গের জন্য গোনায় ধরার মত না।এইখানে প্রমাণ স্বরূপ পশ্চিমবঙ্গের বাঙালী লেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বইয়ের একটা উদ্বৃতি টাইনা প্রমাণ করতেছি পূর্ববঙ্গের ঐতিহ্য আর বাংলাভাষা রক্ষায় কাগো অবদানঃ

"সেই অভিবক্ত বাংলার বিধান সভায় নবনির্বাচিত মুসলমানরাই ছিলো খাঁটি বাঙালী।এর আগে রাজনীতিতে আসতেন শুধু বড় বড় জমিদার,উকিল,ব্যারিস্টার বা রায়বাহাদুর খাঁনবাহাদুর।তাদের পোশাক হয় সাহেবী অথবা চাপকান।মুখের ভাষা সব সময় ইংরেজী।কিন্তু গ্রাম বাংলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নির্বাচিত মুসলমান প্রতিনিধিরা বিধান পরিষদে নিয়ে এলেন বাংলাভাষা।লুঙ্গির উপরে পাঞ্জাবী পরে আসতেও তাঁদের দ্বিধা নেই।পশ্চিম বাংলার মুসলমানরা তো ধুতি পরে নিয়মিত।তাঁরা তাদের বক্তব্য বাংলায় পেশ করতে লাগলেন।তখন নিয়ম ছিল কোন সদস্য বাংলায় বক্তৃতা করলে তা রেকর্ড তা রেকর্ড করা হোতনা। বক্তব্যের সারাংশ ইংরেজীতে তর্জমা করে দিতে হত।তাই সই।তবু তাঁরা বাংলায় বলবেনই।বাঙালী হিন্দু নেতারা তখন খদ্দেরের ধুতি পাঞ্জাবী ধরেছেন বটে।কিন্তু বক্তৃতার সময় ইংরেজীর ফোয়ারা ছোটান।কে কি বল্লেন সেটা বড় কথা নয়।কে কত জোড়ালো ইংরেজী তুবড়ি ছোটাতে পারেন সেটাই গর্বের বিষয়।হিন্দু নেতাদের মধ্যে হীনম্মন্যতা ছিল যে,সর্বসমক্ষে বাংলা বললে লোকে যদি ভাবে যে,লোকটা ইংরেজী জানেননা!শিক্ষিত মুসলমানদের বালাই নেই।যাঁরা ভালে বক্তা তাঁরাও ইংরেজী ছেড়ে প্রায়ই শুরু করতেন বাংলায়।স্বয়ং ফজলুল হক ছিলেন শিক্ষা দীক্ষায় অনেকের চেয়েই উঁচুতে,তিনি মাঝে মাঝেই ইংরেজীর বদলে শুধু বাংলা নয় একেবারে খাঁটি বরিশালী বাঙাল ভাষায় কথা বলতেও দ্বীধা করতেন না। [দ্রষ্টব্যঃ পূর্ব-পশ্চিম ১ম খণ্ডের ৯৭ নং পৃষ্ঠায়]"

যেহেতু পূর্ব বঙ্গের ঐতিহ্য এবং বাংলা ভাষাটা বাঁচাইছেন মুসলমানরাই সেহেতু তাগো ১৯৮৫ সালে আবিষ্কৃত মঙ্গোল শোভাযাত্রা দিয়া বাংলা সংস্কৃতি বিরোধী কওনের আগে ইতিহাস অবশ্য পাঠ্য।আর আপনাগো মঙ্গোল শোভাযাত্রা কি মঙ্গলের? বুকে হাত দিয়া বলেন তো মঙ্গোল শোভাযাত্রা মঙ্গলকর কিনা!এই একটা দিনে আপনারা জনগণরে রাস্তা আটকাইয়া কি ভোগান ভোগাইতে পারেন সেইটা সর্বজনবিদিত।
এইবার মঙ্গোল শোভাযাত্রা বাদ দিছে খোদ আওামিলীগই-
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বৃহস্পতিবার(এপ্রিল ১৩/২০১৭ ইং) ধানমন্ডিতে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “জনগণের যাতে ভোগান্তি পোহাতে না হয়, সেজন্য শোভাযাত্রা বাতিল করা হয়েছে।”[বিডিনিউজ২৪ডটকম ১৩ ই এপ্রিল ২০১৭]
কেন আওয়ামী লীগ পহেলা বৈশাখের শোভাযাত্রা বাতিল করেছে, তার ব্যাখ্যায় ওবায়দুল কাদের বলছেন, “আমাদের ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের শোভাযাত্রা হয় বাহাদুর শাহ পার্ক থেকে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ পর্যন্ত। আমরা চিন্তা করেছি, এ ধরনের শোভাযাত্রায় জনগণের ভোগান্তি হয়। বহুদিন ধরে কোনো ধরনের র্যালি করার পক্ষে আমরা নই।"

“আমাদের নেত্রীর সংবর্ধনার বড় ধরনের আয়োজন… নেত্রী জানালেন, ‘জনগণকে ভোগান্তি দিয়ে আমার সংবর্ধনার প্রয়োজন নেই’। একই কারণে আমরা শোভাযাত্রাও বাতিল করেছি। আমরা গণভবনে নেত্রীর সঙ্গে বৈশাখী উৎসব পালন করব।… বাইরে মানুষের যেন ভোগান্তি না হয়।”
[দ্রঃঐ]
আপনারা ভোগান তাতেও কোন আপত্তি নাই কিন্তু বাংগালী মুসলমানদের শোভাযাত্রার বিরোধীতা করার কারণে মৌলবাদী,সাম্প্রদায়িক আর ঐতিহ্য বিরোধী কওনের আগে দয়া কইরা ইতিহাস পইড়েন।ইতিহাস একদিন আপনাগোও ক্ষমা করবেনা মিথ্যা অপবাদের দায়ে।

No comments:

Post a Comment