Saturday, November 17, 2018

৫টি কবিতা: সজল আহমেদ

বেতন

একবার তাকিয়ে দেখি আমি আমার দশ বছরের পুত্রের খানার প্লেটে সুস্বাদু খানা হিসাবে আছি, পুত্র আমাকে কচকচ করে চিবিয়ে খাচ্ছে। আবার দেখি আমার বৌয়ের ডায়ামন্ড রিংয়ে ডায়মন্ড হিসাবে আছি।
কিয়ৎক্ষণ পর মেয়ের মেকআপ বক্সে নিজেকে গুটিয়ে থাকতে দেখলাম । মেয়ে আমাকে তুলিতে নিয়ে মাখছে। এর কিছুক্ষণ পর নিজেকে আবিষ্কার করলাম ভাইয়ের মানিব্যাগে। ও আমাকে ওড়াচ্ছে। এরও কিছুক্ষণ পর মায়ের ঔষধের বোতলে, নিরুপায় মা আমাকে গিলে ফেললেন। এরপর আমি আমার নিজেকে আবিষ্কার করলাম নিজের শূণ্য পকেটে!
এরপর আবার আমি পুত্রের প্লেটে, বৌয়ের ডায়ামন্ড রিংয়ে, মেয়ের মেকআপ বক্সে, ভাইয়ের মানিব্যাগে, মায়ের ঔষধে এবং ক্রমানুসারে নিজের শূণ্য পকেটে।

বিভ্রান্ত
লতা বিভ্রম পাতার
ডালে বিস্তৃত সোনার মাদুর
পোকা খাবার লোভে ছোটে
কয়েকশ বিভ্রান্ত বাদুড়।
জানে না বাদুড়
আগালে কয়েকটা ধাপ
সামনেই পাঁতা
আছে মৃত্যুর ট্রাপ!
চাঁদটা হারিয়ে যায়, মেঘের সয়ে অকথ্য যন্ত্রণা
বিভ্রান্ত জোনাক শোনে আঁধারের কুমন্ত্রণা।
জোনাক আর জ্বলেনা
চাঁদ ও ওঠে না
বাদুড় আর ফিরে আসেনা
গাছে বিছানো সোনার মাদুরে
কেউ এসে বসে না।
চলে…
লওহে মাহফুজে এক
একাকী কোরানিক বন্দনা,
বিভ্রান্ত শয়তান ছুটে চলে
পথভ্রষ্ট করার আকাঙ্খা।
ছুটে মসজিদে মসজিদে
ভাঙতে এবাদত
করায়ত্ব হাজীর পাগড়ী করে
লাগায় কলহ; কে শরীয়ত কে মারফত!
কার টুপি লম্বা, গোল। কে রেখেছে দাঁড়ি;
বিভ্রান্ত সবাই, মসজিদে কি আসতে পারবে নারী?
বিভ্রান্ত সকলে বিভ্রান্ত ইমাম,পুরোহিত, রাব্বি, গির্জার যাজক!
চলে কথার বাহাজ, রুষ্ট উপাসক
ফাঁকে ফুরিয়ে যায় সমস্ত ইবাদত!
কে শ্রেষ্ঠ?
মুহাম্মদ না যিশু?
কে জ্ঞানী?
ওসমান নাকি বিশু?
কার গ্রন্থ জগতের এলমের দ্বার…?
কাফের নাকি মুমিন্স ছিলো সম্রাট আকবর?
কে নাস্তিক? কে আস্তিক? কে কাফের বেঈমান
সংশয়বাদী খুন করো ওর ঘটে নেই ঈমান।
অদৃষ্টের পরিহাস – বিভ্রান্ত ইতিহাস,
আকবরি খচ্চর, অশোকের শিক্ষালয়
ভেঙেছে সুলতান মাহমুদ,
দুনিয়া বানিয়েছে যুদ্ধালয়!
অথচ ছিলো কিনা অশোক
তারই নাই কোন হিসাব
বিভ্রান্ত, বিভ্রান্ত, বিভ্রান্ত সব!
বিভ্রান্ত সত্ত্বা, মৃত্যুর পর কই যাবে আত্মা?
কবরের আজাব হবে নাকি হবে না?
বিভ্রান্ত নাস্তিক, পরপার কি আছে? এই ভাবনা!।

হাঁস
আসসালামু আলাইকুম হে সলিলে সাঁতারানো হাঁস,
তোমার লগে কাটবো সাঁতার মনে অভিলাষ।
চলো সাঁতারাই গভীর নদীতে আর খুঁজে খাই শামুকের ছানা,
মন তৃপ্ত থাকলে নিস্ফল গিলতে শরীর করে না মানা।
চলো; পারি যদি উড়তে কি দোষ খোলা আসমানে;
পাতিহাঁস যদি উড়তে পারে তুমিও পারবে চলো আগাই সামনে;
উড়ি আকাশে।
ইয়া হাঁস! অপ্রকৃতস্থ হয়ো না আজ –
অসময়ে অপ্রকৃতস্থ নিজের পেছনে বাঁশ!


উচ্ছিস্ট
আমি মারা গেলেও পৃথিবীর কোন স্থানের মদের আড্ডা কিংবা কোন ব্রথেলস অথবা কোন কনসার্ট, একটা সেকেন্ড এর জন্যও থেমে থাকবে কি? হাতেগোণা কজন ছাড়া আর কেউ শোক প্রকাশ করবে কি?

সেদিন
আর সেদিন পৃথিবীর সব পাপ একত্রে জড়ো করা হলে;
তুমি কাঁপতে থাকবে ভয়ে যেন তোমার মৃগী রোগ হয়েছে!
আল্লা
তোমার
সামনে;
তুমি
আল্লার
সামনে!
দুজন দুজনার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বা বোসে……….
হঠাৎ আল্লা যদি তোমার সমস্ত পাপের হিসাব চায়-
ইয়া মাল হাবীবি!
তুমি তখন কাঁদবে যেমনটা আর কখনোই কাঁদোনি!
তোমার নেক বা গোনাহ্’র পাল্লা কতটা ভারী হবে তুমি জানো না!
তুমি শুধু এই জানো “একজন পাপী তুমি আর এখন তোমার সমস্ত পাপের হিসাব নেয়া হবে। তুমি কাঁদবে অথচ কাউকে অভয় দেয়ার পাবে না।”
আমার সাথে করা বিগত পাপ তোমাকে উৎকন্ঠিত করবে
তোমার মনে হতে থাকবে আমারে।
আর আমার সাথে করা সমস্ত অপরাধরে
তোমার মনে হতে থাকবে।
কেননা সেদিন-
আল্লা
তোমার
সামনে;
তুমি
আল্লার
সামনে!
দুজন দুজনার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বা বোসে……….
আমার সাথে করা সমস্ত পাপ এর হিসাব তোমাকে দিতে হবে!
তুমি যেহেতু পাপ করেছো সেহেতু এর সব দায়ই তোমার
হয়তোবা দহন পাবে হাবিয়ার।
তোমার পুড়তে হবে!
কেননা ঐ দিন,
আল্লা
তোমার
সামনে;
তুমি
আল্লার
সামনে!
দুজন দুজনার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বা বোসে……….

No comments:

Post a Comment