Sunday, December 16, 2018

দেবী থেমিসের মূর্তি: প্রফেসর মুহম্মদ জাফর ইকবাল এর প্রতি

মুহম্মদ জাফর ইকবাল (ছবি: উইকিপিডিয়া)
মুহম্মদ জাফর ইকবাল



২রা জুন, ২০১৭ বিডিনিউজ২৪ডটকম এ মৃণালের ভাস্কর্য নিয়ে ছাপা হওয়া জাফর ইকবালের কলাম একটা কলাম ছাপে 'স্বপ্ন ভেঙে নয় স্বপ্নের অংশীদার হয়ে' শিরোনামে। কিভাবে বিভিন্ন ইস্যুর সাথে মুক্তিযুদ্ধ জড়িয়ে তার সাথে এক চা চামচ আবেগ মিশিয়ে তরুণ প্রজন্মকে খাওয়াতে হবে সে বিষয়ে প্রফেসর উটপাখি মুহম্মদ জাফর ইকবাল ভালোই জানেন (উনি নিজেকে উটপাখি ভাবেন)। আর চেতনার বলি চশমা পড়া ছাত্র/ছাত্রীরা প্রতিদিন স্যার স্যার করে যা গিলায় ওটাই গিলে নেয় হিঃ হিঃ! স্যারের নামে প্রতিদিন তিনশ দুম্বাহ জবেহ করে স্যারকে উৎসর্গ করেন। জ্বী হুজুর! জ্বী জনাব! জ্বী স্যার এজ্ঞে ইত্যাদি পাখির কলরবে স্যারের চারপাশ মুখরিত থাকে। প্রতিটা 'আজ্ঞে জনাব' টাইপের পত্রিকা ওয়ালারাও স্যারের কলাম ছাপতে মুখিয়ে থাকেন। বিডিনিউজ২৪ডটকম এ প্রফেসর ইকবালের ঐ কলামে আমি একটি মন্তব্য করি কিন্তু বিডিনিউজ২৪ডটকম সেটি অ্যাপ্রুভ করার সৎ সাহস দেখায়নি। পাছে থলের বিড়াল বেড়িয়ে দুধ খাবে কিনা কিংবা প্রফেসরের মানইজ্জত ধুলোয় মিশে যেতে পারে, এই ভয় ছিলো মনে সম্ভবত। আর এভাবে মানইজ্জত চলে গেলে পরবর্তীকালে প্রফেসর বিডিনিউজ২৪ডটকম এ তাঁর কোন লেখা জমা নাও দিতে পারে! এই ভয়েই সম্ভবত মন্তব্যটি অ্যাপ্রুভ করা হয়নি।
এই লিংকে জাফর ইকবালের কলামটি: এখানে
আমি এই প্রশ্নগুলো প্রফেসর জাফর ইকবাল এর প্রতি রেখেছিলাম ২রা জুন ২০১৭ইংরেজী তারিখে ঐ কলামে মন্তব্যের ঘরে।

২/০৬/১৮ ইং
প্রফেসর জাফর ইকবাল কে ধন্যবাদ তাঁর লেখার জন্য। আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি কারণ দেবী থেমিসের ইস্যুতে আমি আপনার সাথে একমত নই। তবে আমি আশ্চর্য হই এই দেখে যে হেফাজতে ইসলামকে আপনি যেই দোষে দোষী করছেন ঠিক সেই দোষেই আপনি বা আন্দোলনকারীরা দুষ্ট। হেফাজতে ইসলাম যেমন সকল কাজে ধর্মকে পুঁজি করছে আপনি বা আন্দোলনকারীরা মহান মুক্তিযুদ্ধকে পুঁজি করছেন। ধর্মব্যবসার মত মুক্তিযুদ্ধ ব্যবসা হয় কিনা আমার জানা নেই। না হলে আপনি কেন বিভিন্ন ইস্যুতে একমাত্র মুক্তিযুদ্ধকেই ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেন?

   [ক] প্রথমত,আপনি বারবার ত্রিশলক্ষ শহীদকে টেনে আনছেন এখানে প্রশ্ন থেকেই যায় ‘তাহলে কি শহীদগণ ভাস্কর্য বা রাম/বামদের সকল দাবীর পরিপ্রেক্ষিতে শহীদ হয়েছেন?’ 
জনগণের জন্য কি শহীদ হননি তাঁরা?
আপনার মত যদি হেফাজত ও শহীদদের/ মুক্তিযুদ্ধ ইত্যাদি পুঁজি করে ভাস্কর্যের বিরোধীতা করেন তখন কি করবেন? আর থেমিসের এই গ্রীক মূর্তিতে একাত্তরের কোন চেতনাটা দেখা যাচ্ছে বুঝিয়ে বলুন। 
    [খ] প্রফেসর সাহেব,আপনার কলাম পড়ে মনে হলো থেমিস, আর্টেমিস, হেরা, মিনার্ভা আর ভেনাসের মূর্তি বসানোর জন্যই মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল। আপনি যেভাবে বলছেন তাতে মনেহয় একমাত্র এই স্বাধীন দেশে আপনারা ছোট্ট একাংশরা যা বলবেন তাতেই দেশ চলবে। যেহেতু গণতন্ত্রবাদী বাংলাদেশ সেহেতু আপনার পক্ষে যদি আপনি তিন এর একাংশও না দাঁড় করতে পারেন তাহলে বলে রাখা ভালো, আপনার কোন দাবীই মেনে নেয়া হবে না। একথাও বলতে হচ্ছে- মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিলো বাঙালীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কোন বিদেশী থেমিস দেবীর ভাস্কর্য গড়তে নও।


   [গ] দ্বিতীয়ত, এই মূর্তির(ভাস্কর্য) পক্ষে আপনি গুটিকয় লোক ছাড়া পাবেন না। তাদের পরিমাণ নগন্য,তবুও ধরলাম ১০%। আর বিপক্ষে রয়েছে ৯০%। আপনি আপনার পেজ এ পোস্টের মন্তব্যগুলো দেখলেই বুঝতে পারবেন মূর্তির বিপক্ষে কতজন আর পক্ষে কতজন। প্রফেসর সাহেব, এখন কথা হচ্ছে কোটি কোটির চেয়ে গুটিকয়েক এর মতামত গ্রাহ্য করতে হবে কেন? আপনার অবস্থান থেকে আপনি যতটা নিজকে সঠিক মনে করেন তাঁরাও নিজেদের অবস্থান থেকে নিজেদের সঠিক মনে করেন।

 যেহেতু সরকার গণতান্ত্রিক সেহেতু জনগণের দাবী তাকে মানতেই হবে। এক্ষেত্রে গণতন্ত্র রক্ষায় আওয়ামিলীগকে ধন্যবাদ দেই যে তাঁরা গণমানুষের পক্ষে গিয়ে ভাস্কর্যটি সড়িয়েছেন। আরেকটি কথা না বল্লেই নয়; প্রায় উলঙ্গ এবং জাতীয় ঈদগাহের পার্শ্ববর্তী হওয়ায় এটা স্থানান্তর করা হয়েছে (একেবারে অপসারণ করা হয়নি)। এখানে মুসলমান সম্প্রদায় এর বছরে ২ বার ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। মুসলমান কেউ চাইবেনা ঈদের নামাজ পড়ে উঠেই দেবী দর্শন করতে। তৃতীয়ত প্রফেসর সাহেব,আপনি বিভিন্ন দেশের ভাস্কর্যের কথা বলছেন। আমাদের দেশেও ঢের ভাস্কর্য আছে,কেউ সেগুলো নামাতে যায়নি (হেফাজত দাবী করলেও সরকার তাতে কান দেয়নি)। এর মধ্যে নগ্ন ভাস্কর্য ও আছে। দেবী থেমিসের ভাস্কর্য সড়ানোর ইস্যুতে আমি মৃণালের দোষ দেবো। 

   [ঘ] মৃনাল হক টক শোতে যে বক্তব্য রেখেছিলেন তাতে এটি প্রতীয়মান হয় – উনি মার্কিনদের রুচি খেয়াল যতটা বোঝেন বাংলাদেশের রুচি খেয়াল ততটা বোঝেনই না। বাংলাদেশের মানুষরা সম্পূর্ণ অনুভূতিসম্পন্ন কোন বিষয়টি ভালো হবে আর কোনটি মন্দ এসব বুঝার ব্যাপারে। মৃণাল হক বেশ ঔদ্ধত্যের সাথে টিভি টকশোতে বাংলাদেশীদের অশিক্ষিত বলে গালি দিলেন বলে মনে মনে অনেকটা ক্ষোভ ও কষ্ট পেয়েছিলাম। আসলে বিদেশে দুচার কলম পড়াশুনা আর একাধিক ডিগ্রীলাভ করেই সকলে শিক্ষিত হতে পারে না, স্মার্ট হতে পারে না মৃণাল কে টিভি সেট এর সামনে দেখে একথাটিই বারবার আওড়াচ্ছিলাম। শিক্ষিত আর স্মার্ট হতেও আপনাকে কথা বলতে শিখতে হবে। কোন স্থানে কোনটি বলা আপনার জন্য মঙ্গলের সেসব মাথায় রাখা চাই।
চিরাচরিত ভাস্কর্যে সচরাচর বাংলাদেশীরা কেউ কখনো আপত্তি করেনি। ভুঁইফোর কিছু হলে সেটা যদি উদ্ভট বা এমন কিছু প্রতীয়মান হয় যা অমঙ্গলকর তবে প্রতিবাদ অবশ্যম্ভাবী। ময়মনসিংহ টিচার্স ট্রেনিং কলেজে এবং উইমেন টিচার্স ট্রেনিং কলেজে নগ্ন নারীমূর্তির যে ভাস্কর্যগুলি আছে তা তো আপনি দেখেছেন, তা নিয়ে কোন ঝামেলা হচ্ছে না, ফুলার রোডে, টিএসসিতে, কলাভবনের ইত্যাদির ভাস্কর্য নিয়েও কেউ টু-শব্দটিও করেছে না। কারণ সেখানে সকলেই যেতে পারে না। একমাত্র তাঁরাই ওখানে যেতে পারেন যারা ভাস্কর্য বিষয়ে যথেষ্ট জ্ঞান রাখেন। ঐসকল ভাস্কর্যগুলির প্রেক্ষাপট ও কিন্তু গ্রহনযোগ্য হয়েছে। কিন্তু এই যে বিদেশী থেমিস বা বাঙালী নারীর তথাকথিত ভাস্কর্যটি এতটাই বেশি অশ্লীল, দৃষ্টিকটু হয়েছিল যা গনতান্ত্রিক পরিবেশে বল প্রয়োগের মাধ্যমে আরোপ করা একদমই অনুচিৎ।
মৃণাল মূলত আমাদের বাঙ্গালীদের অশিক্ষিত বলে ছোট করার পাশাপাশি বিভ্রান্তিতেও ফেলেছে। মৃণাল গ্রীক দেবীর মূর্তিকে বিকৃত করেছে এবং বলছেন এটা বাঙ্গালী মেয়ের ছবি। হা হা হা কী একটা ব্যাপার ভাবা যায়!

  [ঙ] আবার যারা আন্দোলনে নেমেছে তাঁরা বলছেন ‘এটা ন্যায়ের প্রতিক(মূলত কুসংস্কার) দেবী থেমিসেরই মূর্তি’। তাহলে আমরা কার কথা শুনবো?

আরেকটা প্রসঙ্গ বাদ দেয়া যায় না কোনমতেই, সেটি হলো দেবী মূর্তির খরচাদির কথা। এই ফাও মূর্তি স্থাপনে বাংলাদেশ অার্থিক ভাবে অনেকটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখনো বাংলাদেশ মোড়ে মোড়ে ভাস্কর্য করার মত সম্পদশালী হয়েছে কি?
বিভিন্ন সূত্রমতে শুনতে পেলাম;শুধুমাত্র শাড়ি পড়াতে মৃণাল প্রধান বিচারপতি থেকে খসিয়েছে দেড়কোটি টাকা! মৃণাল এতই নিবেদিতপ্রাণ বিনে পয়সায় তো কাজটা করতে পারলো না।
' বাংলাদেশ ভালোবাসি কিন্তু অর্থ দিয়ে নয় কিংবা বাংলাদেশের জন্য রক্ত ঢেলে দিবো কিন্তু নিজের শরীর থেকে একটা ফোটও না' ব্যাপারটা এরকম হলো না?

  [চ] প্রফেসর সাহেব, সর্বশেষ এই বাংলাদেশ স্বাধীন করা হয়েছে বাঙ্গালীদের সকল প্রকার দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করতে, বাঙ্গালীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। ত্রিশলক্ষ বা তার কমবেশি শহীদ ও হয়েছে একমাত্র বাংলাদেশীদের সকল দাসত্বের শৃঙ্খল হতে মুক্ত করতে। কিন্তু আদৌ আমরা তা পারিনি। আপনি নিজেই কখনো গণমানুষের পক্ষে কথা বলেননি। উপরন্তু বিভিন্ন আধুনিকতার দোহাই দেখিয়ে বাচ্চাদের আষাঢ়ে গল্পের সায়েন্স ফিকশন গিলিয়ে রহমত, করীম মিঞা কে দাঁড় করিয়েছেন অশিক্ষিত বাঙাল হিসেবে আর নায়ক হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন ভিনগ্রহের প্রাণী। আপনি এতএত শহীদদের কথা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের শ্লোক পড়েন, আপনার কাছ থেকে বাংলাদেশ কয়েক ডজন আষাঢ়ে গল্পের সায়েন্স ফিকশান আর একটা অকেজো ভাঙা উড়তে ব্যর্থ ড্রোন ছাড়া আর কী পেয়েছে?

সংযোজন (৮ই ডিসেম্বর ২০১৮) :
 [ছ] বাঙালীরা এখনো দাস। উচ্চবিত্তদের দাস। সরকারের দাস। কারখানা মালিকের দাস। বাঙালীরা পাক দাসত্ব হতে মুক্তি পাওয়ার পর পুনরায় দাসত্ব গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর পর বহুতল ভবন নির্মাণ আর না খেতে পেয়ে মানুষগুলোর মৃত্যু অন্তত তাই বলে। গরীবের মাথায় নুন রেখে বড়ই খাওয়ার মত ধনতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এখানে। কই আপনিতো গরীবের অধিকার তাদের সম্পদ নিয়ে কিছু লিখলেন না! লিখবেন কেমন করে, আপনি তো গণমানুষের পক্ষেই নয়।
আপনার কলম এবং মিছিল তখনই বের হয়,যখন বিতর্কিত কোন ইস্যু খাড়া হয় (অর্থাৎ নিজেকে বারংবার আলোচনায় আনার সুযোগ হাত ছাড়া করতে চায় না কেউই)। 

গরীবরা কেন না খেয়ে আছে? কেন চিকিৎসার অভাবে শিশুরা/বৃদ্ধরা মারা যাচ্ছে? কেন স্কুল কলেজ ইত্যাদি সামাজিক প্রতিষ্ঠানে বৈষম্য? 
আপনি কখনো ইতিবাচক কোন কলাম লিখেছিলেন মাদ্রাসার ছাত্র নিয়ে? মনে করুন তো।
কেমন করে মন্ত্রী, এমপি, মেয়র প্রতিটা রাজনৈতিক নেতা অতি অল্পতেই আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হচ্ছে? এ প্রশ্নটি করার মতো সাহস কী আপনার আছে? নেই।
জনগণের ৩ হাজার কোটি টাকার বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটটা কী কোন ফায়দা দিচ্ছে? প্রশ্ন করেছেন সরকার কে? না করেন নি। আপনার সে সাহস নেই। আপনার মতো ভাড়াটে বুদ্ধিজীবিদের যেমন লজ্জা কম, তেমনি সাহস ও কম। আপনি জানেন, প্রশ্ন করলেই বিপদ! আপনার প্রফেসরগীরি ছুটে যাবে। সরকারের ইয়ং ছেলেরা আপনাকে বেইজ্জতি করে ধুতি খুলে নিবে। আপনার বিপক্ষে মিছিল বের করবে। আপনাকে পেটাবে, লাত্থি মারবে পেটে একেবারে! আপনি নিজের এতদিনে করা নামডাক খোয়াতে চান না। 
প্রফেসর! মানুষের অধিকার আর লিগ্যাল দাবী-দাওয়া এসব নিয়ে কলাম ছাপুন, মিছিল বের করুন দেখি আপনাদের মানবতার স্বরূপ। জানি আপনি পারবেন না। কারণ আপনি অসৎ!

No comments:

Post a Comment