অধিবিদ্যা মূলত, কোন ধরনের বস্তুর অস্তিত্ব রয়েছে? তাদের প্রকৃতি কি? কিছু জিনিস কি আসলেই আছে নাকি সেগুলো মতিভ্রম? শূন্যতা ও সময়ের বৈশিষ্ট্য কি? মন এবং শরীরের সম্পর্ক কি? ব্যক্তিত্ব কি? সচেতনতা কি? ঈশ্বর কি আছেন নাকি নাই? ইত্যাদি নিয়ে চিন্তা বা নির্ণয় । আমি যে বিষয়টা নিজের জন্য ব্যাপক গবেষণা করেছি সেটা হোলো ‘‘ঈশ্বর কি আছেন নাকি নেই?’’ আমার গবেষণায় বিজ্ঞানকে আমি টোপ হিসাবে ব্যবহার করতে চাইনি । বিশ্বাস করুন বিজ্ঞান যদি আমার চিন্তায় এসেও যায় তা এসেছে তাঁর নিজের প্রোয়জনীয়তা থেকে বা অটোমেটিক । আমি মনেকরি দর্শনকে বিজ্ঞান দিয়ে মাপা অনুচিত। তবে যারা মাপেন তাগো প্রতি আমার কোন রাগ নাই। যারা দর্শনকে বিজ্ঞান দিয়া যাচাই করেন তাঁরা মূলত নিজের বা সমগোত্রীয়দের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য করতেছেন।
১.
আমার বয়স এখন ২০ বছর। ঠিক ৪ বছর আগে অামার আল্লার প্রতি একটু সংশয় জন্মাইছিলো অভিজিৎ টাইপের উগ্র নাস্তিকদের পাল্লায় পরে । আমি তখন ব্লগে ব্লগে কিছু শেখার জন্য ঘুরতাম আর আস্তিক-নাস্তিক বিতর্ক বেশ আনন্দ নিয়ে উপভোগ করতাম। এইরকম আলোচনা দেখতে দেখতে একদিন কিসে কী হইলো বুঝলাম না! আমার মনে আল্লা নিয়া সংশয় দানা বাধতে শুরু করলো! আপনারা বিশ্বাস করবেন কিনা জানিনা, যখন আমার মাথায় আল্লা নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্থান ঘটতো, মাথাটা ঠিক ফাঁকা হয়ে যেতো! মনে হতো পৃথিবীতে আমার আপন বলতে কেউ নাই। পৃথিবীতে আমার আসাটা একটা দুর্ঘটনা। মাশাল্লাহ নিজেই যখন নিজের প্রশ্নের কাছে হেরে গেলাম তখন আমি আবার আল্লার প্রতি বিশ্বাস করা শুরু করলাম। এখন আমার আর আল্লার প্রতি কোন অবিশ্বাস বা সংশয় নেই। মানুষের এমন একটা সময় যায় যে আল্লা নিয়ে মনে বিভিন্ন সংশয়ের উদ্রেক হয়। ফরহাদ মজহারের একটা বইতে পড়ছিলাম এটা। আমিও এই শ্রেণীর আওতাধীন ছিলাম। আমি মনেকরি ঐ সময়টা মানুষের সবচেয়ে কষ্টের হয়! আর সংশয়বাদীরা সবচে বেশি ডিপ্রেশনে ভোগে সর্বদা। পৃথিবীর সবকিছু তাঁর পর মনে হয়। যখন পরকালের ভয়ে একটা অন্যায় কাজ থেকে নিজেরে দূরে রাখতে চায়, তখনই আবার মাথায় আসে “আল্লা’ই তো নাই তাইলে এটা কইরাই ফেলি! বিচারের ভয় তো নাই আমার”! আবার ঐকাজটা করার পর মনে হয় “আহা! এখন যদি মরে যাই, আর আল্লা, পরকাল যদি থাকেই তাইলে আমার অবস্থা কি হবে! ” এমনকি নিজে যে আল্লা বিশ্বাস করেন না এই নিয়াও তাঁর ভয় হয়!
২.
আমি মূলত ঈশ্বরের উপর কিসের ভিত্তিতে বিশ্বাস স্থাপন করি সে বিষয়ে আলোকপাত করতে চলছি । দয়াকরে এখানে বিতর্ক করবেন না । এটা নেহাৎ’ই আমার বিশ্বাস এবং চিন্তা , আপনার চিন্তার সাথে আমার চিন্তার যে মিল থাকতেই হবে এমন পৌত্তলিকতা থেকে দয়া করে দূরে থাকুন । আমার দর্শন চর্চা একান্তই আমার চিন্তা চেতনারই ফলাফল । মানুষ হিসাবে আপনার চিন্তার সাথে আমার চিন্তা কাকতালীয় ভাবে যদি মিলেও যায় সেক্ষেত্রে আমি অবাক হব না । হতে পারে আমার মধ্যে জন্মানো চিন্তা অন্য কারো মধ্যেও জন্মাতে পারে , এবং তিনি তাঁর এই দার্শনিকতা প্রচার ও করেছেন, আমি তাতেও দুঃখিত নই । মানুষ জাত হিসাবে চিন্তার মিল থাকাটা অবাঞ্ছনীয় নয়, যেমন আমার প্রথম চিন্তার সাথে হুমায়ুনের চিন্তা মিলে গেছে । আমার চিন্তার বিষয় ‘‘ঈশ্বর কি একজন আছেন? একজন ঈশ্বর কেন থাকবেন? কেন তাঁর থাকতেই হবে? কেন ঈশ্বর না থাকাটা অযৌক্তিক? কেন ঈশ্বর মানুষের মত হতে পারবেনা?’’আমি জাকির নায়েক বলেন, আর যারই বলেন সবার লেকচার শুনছি কিন্তু কাজের কাজ তখন কিছুই হয়নাই। একমাত্র নিজের চিন্তায় আল্লার প্রতি বিশ্বাস আসছে। তবে জাকির নায়েকরে ধন্যবাদ। তিনি খুব ভালোকাজ করতেছেন। তিনি নিজের গোত্র (মানে সকল মুসলমানের জন্য কাজ করতেছেন)।
৩.
আমি মাত্র ২ টা বিষয় নিয়ে এখানে আলোচনা করছি। ঈশ্বর কি একজন আছেন? আমরা যদি পৃথিবীর প্রত্যেকটা জিনিস পর্যবেক্ষণ করি,একমাত্র প্রাণী জগৎ ছাড়া খোলা চোখে প্রমাণ পাই ‘‘প্রত্যেকটা বস্তুর রয়েছে একজন ঈশ্বর বা স্রষ্টা” । এক্ষেত্রে হুমায়ুন আহমেদ এর সাথে আমার যুক্তি মিলে যাচ্ছে । তিনি অবশ্য বিবর্তনের বিরোধীতা করে এই যুক্তিটা উপস্থাপন করেছেন, আমি ঈশ্বরের উপস্থিতিটা এইরকমই “প্রাকৃতির বিভিন্ন পর্যায়” নিয়া ভাবতে ভাবতে পাইছি। হুমায়ুন নাইকন ক্যামেরা দিয়ে যুক্তিটি উপস্থাপন করেছিলেন , আমি অবশ্য অন্য কিছু নিয়া ভাবছিলাম । হুমায়ুন এর সাথে আমার চিন্তার মিল আছে এর দ্বারা নিজের ব্যক্তিত্ব ও একটু ঝালাই করে নিচ্ছি । তাই উপস্থাপন করছি হুমায়ুন এর চিন্তাকেই । হুমায়ুনের চিন্তার সাথে সবাই পরিচিত, তাই তাঁর যুক্তি উপস্থাপন করাটা শ্রেয় মনে হয়েছে। তাছাড়া অনেকে বলেই ফেলতে পারে আমি হুমায়ুনের চিন্তা চুরি করছি। কিন্তু হুমায়ুনের বই পড়ার আগেই আমি এইটা ভাবছি। হয়ত হুমায়ুন আমার আগে এই চিন্তাটা করছেন, এবং লিখে ফেলছেন। যাইহোক আসুন হুমায়ুনের যুক্তিই আমরা পাঠ করি ;
“কেউ একজন ভীনগ্রহে গেলেন । তিনি একটি ক্যামেরা দেখতে পেলেন।এখন তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো ক্যামেরাটি এখানে উড়ে এসে জুড়ে বসলো কিনা বা আপনা থেকেই এর পয়দা কিনা । সেখানে তিনি বিশ্বাস করেন, তাঁর সামনে থাকা ‘নাইকন ক্যামেরাটি’র একজন স্রষ্টা আছে কিন্তু তাঁর বা ভীনগ্রহের কোন স্রষ্টা নেই । এটা অযৌক্তিক যে, স্রষ্টা বলে কেউ নেই যেমন অযৌক্তিক ভাবে ক্যামেরাটি তৈরী হলো আপনা আপনি । প্রথমে গ্রহ থেকে প্লাস্টিক উৎপন্ন হলো, তপ্ত গ্রহের বালি থেকে তৈরী হলো কাচ।ক্যামেরার অন্যান্য পার্টস উড়ে এসে বিভিন্ন ধাপে বিবর্তিত হয়ে তৈরী হলো নাইকন ক্যামেরা । আমি অন্তপক্ষে একলা একা কিছু বিবর্তনের পক্ষে কোন ভালো যুক্তিই দেখিনা ।”
আমার চিন্তাটা ছিলো এইরকম’ই যে, “একলা একা কিছু তৈয়ার হওয়া অসম্ভব!” মানুষের মত এত বুদ্ধিমান, নিষ্ঠুর এবং স্বার্থপর মানুষের অন্তপক্ষে একজন স্রষ্টা থাকা উচিৎ!
৪.
আমার ২য় ভাবনাটা ভাবছিলাম ঠিক ৩ বছর আগেঃ
আমি গ্রামে থাকি। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগে এইখানে গরীবের মানবেতর জীবন যাপন দেখি। দেখি তাগো রিলিফে মেম্বার চেয়ারম্যানের বসানো থাবা! দেখি বয়স্ক ভাতার জন্য বুড়ো-বুড়ির ভিখিরির মতো বইসা থাকা। দেখি টাকা আর ক্ষমতার দাপটে দরিদ্র মানুষের প্রতি ঘটা অবিচার! তাগো সম্পদ অবৈধভাবে ভোগদখল দেখি। দেখি রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক এর শ্রেণী বিভাগ! আম্রিকার সাম্রাজ্যবাদী মানুষিকতা দিয়ে এত মানুষ খুন করছে, নারী ও ছোটছোট শিশু মারছে, হিটলার স্ট্যালিন লক্ষ লক্ষ নিরাপরাধ নিরপরাধ মানুষ মারছে! সবচে আমার মনে দাগ কাটছে এক মুরব্বিরে ক্ষমতাসীন দলের এক জুয়ান নেতা মারছিলো দেখে। এই যে যারা দুনিয়ায় বইসা অকাজ-কুকাজ করে হঠাৎ ঐ খুনি অত্যাচারী মানুষগুলো মরে যায় তাদের বিচার তো দুনিয়ায় সম্ভব হলো না। তাহলে এরা কি শাস্তি পাবে না? এদের শাস্তি দেয়ার জন্য কেউ কি নাই? আমার মনে হতে লাগলো,অবশ্যই একজন থাকা দরকার যে এদের শাস্তি দিবেন! দুনিয়ায় শাস্তি যারা দিতো তাঁরা এই লোকটার পক্ষে ছিলো। নিরপেক্ষ এক সত্ত্বা অবশ্যই আছেন! তাঁর থাকতে হবেই হবে! তিনি না থাকলে অত্যাচারী রাজার কে শাস্তি দিবেন? কে শাস্তি দিবেন ঘুষখোর জর্জের? তিনি গরীবরে দিবেন দুনিয়ায় “ভোগ না করার” প্রতিদান। তিনি অত্যাচারীর বিচার করবেন। এবং তিনি মানুষের মতো হবেন না। মানুষের মত চরিত্র হইলে তিনি পক্ষপাতদুষ্ট হবেন।
৫.
একটা সময় ভাবতে ভাবতে যুক্তি মাথায় এমন জায়গায় ঠেকলো যে আমি আনন্দে কাঁইন্দা দিলাম। আল্লার আসমানের দিকে তাকায়া বল্লাম, “অবশেষে আমার সংশয় ভাঙলা! আল্লা! তুমি না থাকলে আমি কবিতা লিখমু কারে নিয়া?” ঐ সময় আমার যে আবেগটা আসছিলো এইরকম আবেগ অন্য কোন সময় আসেনাই। এখনো আমি ঐ একলা দিনটার কথা ভাবি, যেইদিন আমি সংশয় থেকে মুক্তি পাইলাম। আর আসমানের দিকে তাকায়া হাসি(সত্যিই হাসি)। আর আমার গায়ের পশম কাঁটার মত দাঁড়িয়ে যায়! আমি আল্লারে ধন্যবাদ দিই এইভেবে যে, তিনি আমারে পূণরায় বিশ্বাসে ফিরায়ে নিলেন।
No comments:
Post a Comment