সাংবাদিকদের জবাবদিহিতা কেন দরকার?


সময়টা ২০১৭ এর ১২ ই অক্টোবর। এক জুনিয়র সাংবাদিককে চড় মেরেছিলো এক পুলিশ কর্মকর্তা। প্রত্যেকটা টিভি চ্যানেল প্লাস পত্রিকা সেটাকে হাইলাইট করে যার দরুন কোন ঘটনার সঠিক কোন বিশ্লেষন ছাড়াই চাকুরী চলে যায় ঐ পুলিশ কর্মকর্তার।
মানুষ কোন কথাই বলেনি এ নিয়ে, বরংচ পুলিশ কর্মকর্তার ঘাড় মটকে খাওয়ার যোগাড়! এই ঘটনার পেছনে যে সাংবাদিকের ও কোন ত্রুটি থাকতে পারে সে বিষয়ে কোন কথাই হয়নি। কারণ সে সময় পুলিশের কিছু অমানবিক, বেআইনি খামখেয়ালি কর্মকাণ্ডের দরুন পুলিশ মানুষের কাছে শত্রুতে পরিণত হয়েছিলো। অপরদিকে সাংবাদিক সাহেবরা সেসময় দেবতার অবতার স্বরূপ বাঙলাদেশে বসবাস করতেছেন। কী তাঁর দোষ কী সে করলো সে বিষয়ে কোন কথা নেই। এক তরফা ভাবে পুলিশকেই দায়ী করলো। এর প্রতিবাদে এই লেখাটা আমি লিখেছিলাম।
লেখাটি আমি সকল সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে না লিখলেও অধিকাংশকে উদ্দেশ্য করে লিখেছিলাম।
পুলিশ সরকারী চাকুরী করে দেইখা বাধ্যগত ঠিকাআছে। “পুলিশ যদি অন্যায় করে সেইটার জবাব তাগো দিতে হবে” এটা যৌক্তিক এবং এর সাথে কারো মতবিরোধ নাই বলে আমি মনেকরি । কাজেই পুলিশ আর সাংবাদিকের মধ্যে লড়াই হলে জবাবদিহিতা আগে পুলিশের করতে হবে। তাই বইলা সাংবাদিকরা তেলের বাটির মতো তেল তেলায়া পার পেয়ে যাবে সেইটা অযৌক্তিক এবং খামখেয়ালি দাবী। সমাজে তাগোর গুরুত্ব দেখায়া বাঁইচা যাবে তা হবে না তা হবে না। সাংবাদিকরা সমাজে তাদের “সততার / নির্ভীকতার” আলাদা একটা ইমেজ তৈয়ার করছে, কাজেই সাংবাদিক নাম বা সাংবাদিকতা পেশার নাম শুনলেই জনমনে একটা ভক্তির উদ্রেক হয়। তবে ভাবা উচিৎ, সাংবাদিকরা যেই ইমেজ নিজেরা সোসাইটিতে ক্রিয়েট করছেন সেই ইমেজের তাঁরা নাও হইতে পারে। সাংবাদিক মানেই সৎ হবে, সাংবাদিক মানেই নির্ভীক হবে এমন না। এর বৈপরীত্য ও তাগো মাঝে থাকতে পারে। অন্ততপক্ষে উপজেলা পর্যাযে যাঁরা সাংবাদিকতা করে তাঁরা যারপরনাই ভীত এবং দলকানা টাইপের হয়। উপজেলা প্রেসের সাংবাদিকদের সভাপতি হিসাবে যাদের নির্বাচন করা হয় খোঁজ নিয়া জানা যাবে তেনারা সরকারী দলের সাথে সম্পৃক্ত। তাঁরা কিভাবে ব্যক্তি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হন তা উপজেলা পর্যায়ে আসলে বোঝা যাবে। এমনকি উঁচু পর্যায়ের সাংবাদিকরাও নিয়ন্ত্রিত হন। কাজেই দলকানা সাংবাদিক মাত্রই যে সততার অবতার এই ধারনাটা বাতুলতা বৈ কিছু না। আমরা আমাদের ভাবনায় সাংবাদিকদের বর্তমানে এলিট পর্যায়ের মানুষ ভাবা শুরু করছি, মানে সাংবাদিকদের অনেক উচ্চাসনে বসাইছি। কাজেই সাংবাদিকদের সাথে কারো ঝামেলারে আমরা সাধারণ পর্যায়ে দেখি না অন্যভাবে দেখি। অন্যভাবে দেখা অবশ্য ঠিকআছে। যেহেতু বর্তমানে আমরা সংবাদপত্র নির্ভর, কাজেই এইসব প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিগণ আমাদের কাছে সাধারণত একটু বেশিই গুরুত্ব পায়। এই গুরুত্বকে ঢাল হিসাবে ব্যবহার করে তাঁরা আমাদের মন মগজে কী ঢোকাচ্ছে সেই প্রশ্নটা কেউ তাদের করে না! হাতের কাছে ক্যামেরা পাইয়া তেনার কিভাবে ক্যামেরা সন্ত্রাস হয়ে ওঠে পতিতালয়ে প্রবেশ করা সাংবাদিকদের রিপোর্টগুলো সাক্ষী হিসাবে আছে। একটা ক্যামেরা দ্বারা সোসাইটিরে নিজেদের খেয়াল মতো নিয়ন্ত্রণ করতে চান, এবং অপরাধেরর চিত্র তুইলা ধরতে গিয়া তাঁরা মানুষের অধিকারে, গোপনীয়তায় হস্তক্ষেপ করেন! একটা সিম্পল ফ্যাক্টরে তিল থেকে তাল বানানো একজন সাংবাদিকের বাম হাতের খেল মাত্র। সবার মূলে তাদের ঐ ক্যামেরাপণা। হাতে একটা ক্যামেরা হইলেই সাংবাদিক সাব নিজেরে অনেক কিছু মনে করতে থাকেন। পুরা পৃথিবী উল্টায়ে ফেলবেন আরকি! এরপর আসল তথ্যের পাশাপাশি মিথ্যে খবরকেও আসল খবরে পরিণত করার গুণটা তাদের রয়েছে বেশ! সাংবাদিকরা অপরাধ হিসাবে সেটাকেই গণ্য করেন, যেটা রাষ্ট্র কর্তৃক অপরাধ বলে গণ্য করা হয়। এতে যদি একজন প্রলেতারিয়াত তাঁর দাবী আদায়ে রাস্তায় নামে সেটিকেও তিনি এমন ভাবে সন্ত্রাসবাদীদের বিদ্রোহ হিসাবেও উপস্থাপন করতে পারেন যা সবার কাছে বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠতে বাধ্য! একজন সাংবাদিক মিডিয়ার নীতিমালার উর্ধ্বে উঠে সংবাদ উপস্থাপন করতে পারে না? সরকারের কোন অপরাধ তাঁর ক্যামেরায় ধরা পরে না এমনকি কোন জাতী যদি ক্যাপিটালিস্টদের হাত থেকে বাঁচতে বিদ্রোহী হয়ে ওঠে তো তাদের কে সন্ত্রাসী হিসাবে দেখাতে মিডিয়া বা তাঁর তৈরী করা সাংবাদিকদের বাঁধে না।
সাংবাদিকরা যে সমস্ত নীতিমালা বেশ মেনে চলে তাঁর একটা লিস্ট করা যায়।
১) উপজেলা বা গ্রাম পর্যায়ের সাংবাদিকরা মোড়লদের(এমপি, মেয়র, চেয়ারম্যান, মেম্বর, প্রসিদ্ধ ব্যক্তি প্রমুখ) বিরুদ্ধে লিখতে পারেন না বা লেখেন না।
২) জেলা বা বিভাগ পর্যায়ের সাংবাদিকরা মেয়র, মন্ত্রী এবং ধনীদের নিয়ে লেখেন না বা লিখতে পারেন না।
৩) ক্যাপিটাল পর্যায়ের সাংবাদিকরা দুএকজন মাথাওয়ালার বিপক্ষে লিখলেও সরকার কিংবা ক্যাপিটালিস্টদের বিপক্ষে তাদের কলম চলে না।
৪) আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সাংবাদিকরা আম্রিকা, ইসরাইল, ফ্রান্স, জার্মানি ইত্যাদি ইম্পেয়ারালিস্টদের বিপক্ষে লিখতে পারেন না বা লিখেন না।
কেননা এদের নির্ভর করেই সাংবাদিকরা খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকে। যাদের বিরুদ্ধে তাঁরা লিখতে জানেন না বা লিখেন না, প্রকৃতপক্ষে তাঁরাই এইসব নিউজ এজেন্সি এবং তাদের কর্মকর্তাদের পরিচালনা করে। প্রশ্ন হচ্ছে একজন সাংবাদিক কয়টাকা বেতন পায়? কিন্তু এত কম কামাই সত্ত্বেও একজন সাংবাদিক কিভাবে অঢেল সম্পদের মালিক হয় সে প্রশ্ন করেছেন কী? আমি এমন ও সংবাদকর্মীর কথা জানি যাঁরা কিনা প্রকাশ্যে ঘুষ খায়। এবং যাঁর পক্ষ থেকে ঘুষ পেয়েছে তাঁর সম্বন্ধে বেশ সুস্বাদু খবর তৈয়ার করেছে।
কাজেই শুধু যে পুলিশের জবাবদিহিতা করতে হবে তা ও না। আইনের সম্মুখীন হলে “মূল ঘটনা” বিশ্লেষন করে “কার কতটা দোষ” সেটা জানার আগেই একজন পুলিশ কর্মকর্তারে বরখাস্ত ও মানা যাবে না। সাংবাদিকরা তাগো “ক্যামেরা ক্ষমতার ” অপব্যবহার করে এটা জেনে আগেই পদক্ষেপ নেয়া পুলিশ অফিসাররে বরখাস্ত মানে তাঁর প্রতি রাষ্ট্রের অবিচার বৈ কিছু নয়।
SHARE

Mad Max

  • Image
  • Image
  • Image
  • Image
  • Image

0 comments:

Post a Comment