আমার অনেক মজার ঘটনা আছে ছোটকালের।এই ঘটনাগুলা মনে হইলে নিজে নিজেই খলখল কইরা হাসি।
ঘটনাগুলা এমন অবাস্তবের মত যে আপনে ভাবতে পারেন ঘটনাগুলা আমি বানায়া বানায়া লেখতাছি,কিন্তু সত্য হইলো এই যে, লেখাতে যা যা আমি বলতাছি এর ছিটেফোটাও আমি বানাইয়া লিখতাছিনা।সবই নিজের পুরানা স্মৃতি থিকা লিখতাছি।ছোটকালে আমি চলাফেরা করতাম সব সিনিয়র সিনিয়র ভাইদের সাথে।তাঁরা কেহ কেহ আমার থিকা বয়সে ১০-১৫ বছরেরও বড় ছিলো।তাস খেলা থিকা শুরু কইরা এমন কিছু নাই যা তাঁরা আমারে শিখান নাই(এইখানে তাগো দোষ দিতাছি না কারণ আমার ইচ্ছাতেই তাঁরা শিখাইছেন)।তখন আমি কেবল ক্লাশ সিক্সে পড়ি।বয়স ১১-১২ হইবে। সিক্সে থাইকা যেরকম আচরণ হওয়ার কথা আমি তাঁর বিপরীত ছিলাম অর্থাৎ, বয়স ১১-১২ হইলেও আচরণ ছিলো ১৮ বছরের পোলাগো মতন।তাসতোস খেলা সহ বাকিসব তখনই রপ্ত কইরা ফেলছি।তো যাইহোক, আমি তখন বেশি চলাফেরা করতাম ‘মামুন’ নামে আমার এক প্রতিবেশীর সাথে।সম্পর্কে উনি আমার কাকা।তিনি আমার থিকা বয়সে কমসে কম ৭ বছরের বড় তো হবেনই। তবুও বন্ধুর মত ছিলো আমাগো চলাফেরা।উনি খুব সোজা টাইপের লোক ছিলো(সবদিক থিকা না)উনার কিছু গুণ আমারে ঐ বয়সে মুগ্ধ করছিলো। যেমন ধরেন উনি ছিলো চরম পর্যায়ের চাপাবাজ মানুষ!একটা চাপা উল্লেখ করি;একদিন উনি আইসা বললো, ‘জানিস সজল আইজগো একবিঘা সোয়াবিন ত্যালের উপরে একটা ডিম ভাইজ্জা ভাত খাইয়া আসছি’!আমি হা কইরা শুনতাম কি কয় এগুলা কিছু কইতাম না কারণ আমার শুনতে ভালো লাগে!সারাটা জীবন শেখ/শেখ হোয়্যাইট নামক অল্পটাকা দামের সিগারেট টাইনা আসছে আর আমাগো বলতো ঢাকা গিয়া বেন্সন সুইস,গোল্ডলিফ,মার্লব্রো ছাড়া খাই না।আরো একটা গুণ হইলো উনি মানুষরে বেশ পাম পট্টি দিতে পারতেন।একবার উনারে খুশি কইরা দেওয়ার পর বলছিলেন, ’‘সজল তোরে গিটার কিন্না দিমু ঢাকা গিয়া চাকরী লওনের পর’’।যেহেতু উনার লগে চলার দরুন উনি জানতেন, ছোটকাল থিকা আমার একটা গিটারের শখ আছে সেহেতু আমারে এক কথাতেই উনি খুশি কইরা ফেলছেন। উনারে খুশি যেভাবে করছিলাম সেইটাও একটা মজার ঘটনা!আমি মাঝে মাঝে পরিচিতদের লগে জ্যোতিষবীদ হইয়া যাইতাম(এমন ভাব লইতাম যে নিজে ওনাগো ভবিষ্যতের গোড়াগাট্টি সব জানি)।তো আমি একদিন কইলাম ‘কাকা তোমার হাত টা দেও’। উনি কোন প্রশ্ন না কইরা হাতটা দিলেন।আমি হাতটা উপরের দিকে নাড়াইয়া চাড়াইয়া এ রেখা ও রেখা দেইখা কইলাম ‘’তোমার ভবিষ্যৎ তো ফকফকা।রেখায় কোন অান্ধার দেখতাছিনা।ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল,বিশাল ধনের মালিক হবা।সুন্দরী সুশ্রী লম্বা বৌ পাবা।বৌ হইবো তোমারচে লম্বা ২ ইঞ্চি।’’ উনি আমার এই কথা শুইনা এত খুশি হইলেন যে আমারে গিটার দেওয়ার ঐ প্রতিশ্রুতিটা দিয়া ফেল্লেন।তারপর থিকা এই ৯ বছর শেষ হইয়া গেলো গিটার তো দূরে থাক ১ গজ সূতাও উনি আমারে দেন নাই।না দেওয়ার মূলত কয়েকটা কারণ থাকতে পারে।প্রথমত, উনি বড়লোক তো দূরে থাউক এই ক'বছরে জীবনে উন্নতি কি জিনিস উহা চোখে দেখেন নাই।বর্তমানে তিনি বাপের মাথায় বইসা বইসা খাইতাছেন।ঢাকা গিয়া একটা মেয়ে পছন্দ কইরা ফেল্লেন।সে আন্টি আমার মোটামুটি দেখতে রূপসী হইলেও সেই আমার কওয়া মত লম্বাটা আর না।মামুনকা যদি হন ৫ ফুট ৫" তাইলে আন্টি ৪ ফুটের বেশি হবেনা।আমার কথা ঠিক হইলেও উনি আমারে দিতেন না আমি জানি,উনি আসলে চরম পর্যায়ের কিপ্টা ছিলেন এখনো আছে।আরো একটা চরিত্র উনার,উনি যে মেয়ে দেখতো পছন্দ কইরা ফেলতো।গড়ে সব পছন্দ করলেও ওনার বর্তমান বৌ আর এক দাঁতউঁচা কিউটি ছাড়া ওনার জীবনে কেউ আসছে বইলা মনে পরেনা আমার। একবার একটা মেয়েরে পছন্দ করলো, প্রোপোজ দিতে গিয়া জানলো ঐ মেয়েটা ওনার দুঃসম্পর্কের ফুফাতো বোনের মেয়ে।মানে ভাগনি!তাও ঐ মেয়েরে প্রপোজ দেওনের সময় ঐ মেয়েই তারে মামা কইয়া ডাকছিলো(কারণ মেয়েটা উনারে চিনতো,কা'য় চিনতোনা।)
মামুনকার স্মৃতি বলতে গেলে অনেকখানি লেখা হইয়া যাবে কিন্তু শেষ হবেনা তাই আমি সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং ঘটনাটা বইলা মামুনকার অধ্যায়টা শেষ করতে চাই।
তারিখটা ঠিক আমার মনে নাই ।মামুনকা হাওয়া নামের একটা মেয়েরে পছন্দ করতেন।হাওয়া নামের মেয়েটা ছিলো আমাগো এখানকার এক মুরব্বীর বোনের মেয়ে।মামুর বাড়ি প্রায় সপ্তাহান্ত হাওয়া আসতো।সেই দেখাদেখি ভালো লাগা।দুঃখের বিষয়, হাওয়া মামুনকার কৃষ্ণবর্ণ দেইখা জীবনে তাঁরে পছন্দ করেন নাই।মামুনকা আর হাওয়ার মামাদের সম্পর্ক ভালো হওয়ার সুবাদে তিনি সেই ঘরে প্রত্যহ যাতায়াত করতেন।সেই যাতায়াতে সুযোগ পাইয়া উনি সেইঘর থিকা হাওয়ার ৫-৬টা ছবি মাইরা দিছিলেন।তাই সবসময় হাওয়ার ঐ ৫-৬টা লেমিনেটিং করা ছবি উনার পিঠের পিছন দিকে জামার নিচে লুঙ্গীর লগে খোচা থাকতো।হাওয়া মেয়েটার একটা বিশাল রোগ ছিলো রোগটা হইলো মৃগী ব্যারাম!এই রোগটা উঠলে নাকি তাঁরে জুতা শুকতে দেওয়া লাগতো।এই রোগেরর কথা মামুনকার অজানা আছিলোনা তদুপরি এই রোগ মামুনকার ভালোবাসা ঠেকাইয়া রাখতে পারে নাই।
একদিন সকালে আমি আর মামুনকা পুলের উপর গিয়া বসলাম। উনার মুখটা বেশ গম্ভীর দেইখা আমি কারণ জিগাইলাম।উনি কইলেন ‘হাওয়ারে তো ভাও করতে পারতেআছিনা!ভাইয়া ভাইয়া **দায় ঠিকই কিন্তু কামের কালে নাই’!আমি বেশ কইরা সমবেদনা জানাইলাম তারে।হঠাৎ তিনি আমার দিকে তাকাইয়া কইলেন;
‘সজল বাবা তুই আমারে কিছু পরামর্শ দে।কিভাবে তাঁরে সাইজে আনা যাবে?’
‘আমি কি দিমু কাক্কু?’
‘আরে দে,মাঝেমাঝে ছোডগো বুদ্ধিও কামে লাগে।দে তুই’।
জসীম-শাবানা, রিয়াজ-শাবনুর,শাকিল খান-পপি,আনোয়ার হোসেন-আনোয়ারা,গ
োলাম মোস্তফা এগো সিনেমা দেখতে দেখতে তখন মাথায় নায়কীয় বিভিন্ন ফন্দি ফিকির জমা ছিলো।আমি সেইখান থিকাই একটা আইডিয়া মারলাম।কাকার উদ্দেশ্যে কইলাম,
‘কাকা অরে পাইতে হলে তোমার এখন একটা পথই খোলা!’
তিনি বেশ আগ্রহ কইরা জিগাইলেন ‘কি সেই পদ্ধতি?’
‘কাকা তোমারে বিষ খাইতে হবে!’
‘কসকি তুই!’ কাকা বেশ ঘাবড়ায়া গেলেন।
আমি তারে নিশ্চিত কইরা বল্লাম ‘আহা বুঝোনা কেন এই বিষ সেই বিষ না!এই বিষ হইবে নকল বিষ।তুমি একটা ভিটামিনের কৌটা যোগাড় কর,সেইটায় থাকবে চিনির পানি।হাওয়ার কাছে গিয়া জাস্ট কৌটাটা খুইলা বিষ হিসাবে চালাবা।আর বলবা, 'হাওয়া তুমি আমারে ভালোবাসলানা তাই বিষটা খাইলাম,ভুল হলে ক্ষমা করে দিও!' তারপর দেখবা মাইয়া এক্কেবারে কাইত’।
মামুনকা কিছুক্ষণ মৌনতাবলম্বন করলো,আশেপাশে না তাকাইয়া সোজা বাড়ি দিকে হাইটা গেলো।আমি বেশ ঘাবড়ায়ে গেলাম। ভাবছি আমার পরামর্শে উনি বেশ চোট পাইছেন।আমিও বাড়ি গেলাম। দুপুর তখন ২ টা।মামুনকা আমারে ডাক দিলেন।আমি ঠিক দৌড়ায়া ওনার কাছে আসছি।আইসা আমি অবাক!ওনার হাতে ছোট্ট একটা ভিটমিনের শিসি।কই থিকা যেন যোগাড় করছেন।শিসির উপরে আবার কলম দিয়া আর্ট কইরা লেখা ‘বিইষ’!আমার দিকে চাইয়া একগাল হাইসা কইলেন ‘সব কম্প্লিট এহন ল’।আমি জিগাইলাম ‘কই যাবা?’ উনি আমারদিকে তাকায়া ভেংচি মত কাটলেন ‘কোঁই যাবা নাঁ? মন নাই হালারপো? হাওয়াগো বাড়ি যামু।আইজ যা হওয়ার হবে।আমিও ঐ পণ কইরা মামুনকার লগে হাটা শুরু করছি।প্রায় ১ ঘন্টা যাওয়ার পর হাওয়াগো বাড়ি পৌঁছাইলাম।গিয়া দেখি হাওয়া উঠানের সামনে জলচৌকিতে বইসা কাঁথা সিলাই করতাছে।আমরা প্রথম হাওয়ার কাছে দাঁড়াইলাম না সোজা তাগো ঘরে, যেন কেউ সন্দেহ না করে যে আমরা হাওয়ার জন্য আসছি।যেহেতু হাওয়ার মা আমাগো গ্রামের মেয়ে সেহেতু সে আমাগো চিনে।চেনার খাতিরে সে বসতে কইলো।বসার পর আমাগো মুড়ি আর কি কি যেন খাইতে দিলো ঠিক মনে নাই।খাওয়ার পরপরই আমরা উঠলাম, বিদায় নিয়া বাড়ির সামনে উঠানে আসলাম,হাওয়া যেইখানে কাঁথা সেলাই করে।আমি মামুনকা রে হাত দিয়া চিমটি কাটলাম যে উনি কাজটা এখনই করেন।মামুনকা হাওয়ার পাশে গিয়া দাঁড়াইয়া সালাম দিলেন;
‘হাওয়া আসসালামু আলাইকুম কেমন আছো?’
‘অলাইকুম সালাম।ভালো আপনে কেমন আছেন মামুন ভাই?’
মামুনকা ভালো আছেন কিনা তা না কইয়াই ঐযে নকল বিষের কৌটাটা বাইর করলেন।উনি শিসি খুইলা গপগপ কইরা দুই ডোজ খাইলেন।আমার ওনারে দেইখা কেন যেন নায়ক জসীমের কথা মনে পইরা গেলো।জসীম যেমন বিষ খাইয়া দাড়াই সাপের মত দাড়াইয়া গলা চাইপা ধরে উনিও নকল বিষ খাইয়া দাড়াই সাপের মত দাড়া হইয়া আছে।হাওয়া কেন যেন বিষ খাওয়া খেয়াল করেনাই সে একমনে সেলাই করতাছিলো।এইবার মামুনকা আরো দুইডোজ খাইয়া হাওয়ার দিকে চাইয়া চোখটোখা বড়বড় কইরা ফেল্লেন তারপর ঠিক আনোয়ার হোসেনের মত বুকে হাত দিয়া কইলেন,
‘হাওয়া আঃ আঃ আঃ! আঃ আঃ আঃ হাওয়া!’ হাওয়া মামুনকার দিকে তাকায় আছে।আমি দৌড়াইয়া আইসা ধরলাম ‘কাকা কি হইছে কি হইছে?’ ‘হাওয়া আঃ আঃ আঃ’ ছাড়া মামুনকা এক নাগারে আমার শিখাইনা কথাগুলা আর কইতে পারলেন না।বেশিক্ষণ থাকলে পরিস্থিতি ঘোলাটে হইতে পারে ভাইবা আমার কান্ধে মাথা ঠেকাইয়া তারে নিয়া বাইর হইয়া আসলাম।যেইনা হাওয়াগো বাড়ির সীমানা পার হইছি,কোলায় নাইমা জান বাঁচাইনা দৌড় দিয়া বাড়ি চলে আসলাম।বাড়ি আইসা মামুনকা তার বাড়ি, আমি আমার বাড়ি চইলা আসলাম।৩দিনে আর বাড়ির বাইর হইনাই!৩দিন পর বাড়ি থিকা বাইর হইয়া একটা দুঃসংবাদ শুনলাম!মামুনকা ২দিন আগে ঢাকা চইলা গেছে।কেমন কইরা যেন তাঁর বাড়ি এই বিষ খাওয়ার ঘটনা জানাজানি হইয়া গেছে তাই তাঁর বাপে ঘেটি ধইরা ঢাকা পাঠাইয়া দিছেন।আমি শুকরিয়া করলাম আল্লাহ্ আমারে বাঁচাইছেন! তারপর হাওয়ার লগে অনেকবার দেখা হইছে কিন্তু শরমে মুখের দিকে তাকাইতে পারিনাই।এখনো মামুনকারে দেখলে সেই কথা মনে পরে।নিজে নিজেই খলখল কইরা হাইসা উঠি।বন্ধুবান্ধব অনেকেরেই গল্পটা বলি,ওরা একটু হাসলে সমস্যা কি? হাসলে হার্ট ভালো থাকে।
0 comments:
Post a Comment