প্রতিশোধ



একটা মজার গল্প বলি,আমার এক বন্ধু আছে ওর নাম মোহাইমিন। খুবই বুদ্ধিমান,রাগী,হ্যান্ডসাম,মিষ্টভাষি আর ডানপিটে স্বভাবের।ওর আরেকটা গুন হলো, কথায় ওকে কেউ ঠকাতে পারেনা।বন্ধু মহলে ওকে আমরা ক্ষেপাই পিষুপিষু নামে।পিষুপিষু নাম হওয়ার ঘটনাটা হচ্ছে, স্কুলে পড়াকালীন ওর একটা বিড়াল ছিলো,হুলো বিড়াল। গর্দান মোটা আর বেশ ভারি ছিলো বিড়ালটা, ও শখ করে বিড়ালটার নাম রেখেছিলো পিষুপিষু। ও প্রত্যেকদিন বিড়াল কে কি খাওয়ালো,কি শ্যাম্পু দিয়ে গোসল করালো ইত্যাদির বিবরণ স্কুলে এসে বেশ গর্বের সাথে বলত।ওর সেই কথা দিয়েই স্কুলের দুষ্টু ছেলেরা ওর নাম বিড়ালের নামে পিষুপিষু দিয়ে দিলো।কিন্তু মজার কথা হলো,মার খাওয়ার ভয়ে এই নাম ওর সামনে কেউ নিতে পারেনি!একবার বন্ধু আলী মহিবুল বলে এমন ঘুষি খেলো যে তিনদিন বিছানায় পরেছিলো।সেই থেকে বন্ধুরাও ওকে এই নামে কখনো ডাকেনাই।যাক সে কথা।হ্যান্ডসাম আর মিষ্টভাষী হওয়ার দরুন গার্লফ্রেন্ড জোটাতে ওর বেগ পেতে হয়নি।ফেইসবুকের মাধ্যমে আমাদের কলেজেরই একজন জুনিয়র মেয়ে কে জুটিয়েছেন তার নাম নদী।নদী যারপরনাই ভদ্র ও সুশ্রী মেয়ে পড়ে আমাদের কলেজে ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে,নদী যখন কলেজ থেকে হেটে যায় তখন কলেজের ছেলেরা ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে,মুখে মশা মাছি গেলেও টের পায় না।সকলের বুকে রোলার চালিয়ে মোহাইমিন কেমনে গোছাতে পেরেছে সেটাও আমাদের কাছে এক কোটি টাকার রহস্য!আমার সব বন্ধুদেরই একজন করে ইয়ে আছে আমিই একমাত্র লোক যার কপালে এখনো কেউই জোটেনি,মাঝে মাঝে বন্ধুরা আমার দিকে এমন করে তাকায় যেন ভীনগ্রহের কোন সিঙ্গেল প্রাণী দেখছে,কখনো কখনো শ্লেষ ভরা কন্ঠে আমাকে বলে,খুঁজে দেবো নাকি একজন?
নদী আমার সিঙ্গেল লাইফের কথা মোহাইমিনের কাছে শুনে করুণার দৃষ্টি দিয়ে বলেছিলো,"ভাইয়া আমার খোঁজে একটা ভালো মেয়ে আছে, অনুমতি দিলে চেষ্টা করতে পারি।" আমি কি বলব ভেবে পাচ্ছিলাম না,বল্লাম "না আপু দরকার নেই,আমার যা চেহারা তাতে আপনার সন্ধানের লোক ভূত বলে ভয় পেয়ে পালিয়ে যাবে।" নদী দাঁত বের করে হোহোহো করে এমন ভাবে হাসলো, লজ্জায় আমি মোমের মত গলে উবে যেতে পারলে বাঁচতাম বন্ধুর গার্লফ্রেন্ডের কাছে নিজের ইজ্জত পাংচার হওয়ার পর আমি আর ওদের সামনে যাইনি ১ মাসে।এর মধ্যে হঠাৎ একদিন কলেজে প্রেমিক যুগল এর সাথে দেখা।নদী আমাকে দেখে মিটমিট হাসছে।মোহাইমিন হালকা হলুদ দাঁত বার করে হেহে করে হেসে বল্ল,
"তোমার মত বলদ দিয়ে হালচাষ ও হবেনা!মেয়েদের সামনে দাঁড়াতে পারে না ওটা কেমন পুরুষরে? তুই জানিস মেয়েটা তোকে কি বলেছে?"
"এতদিন কই আসিলি তোর কি আমাশয় হইছিলোনি? হেঁহেঁহেঁহেঁ" মনে চাইতেছিলো দাঁত কপাটি খুলে ওর হাতে ধরিয়ে দেই,কিন্তু শত হলেও গার্লফ্রেন্ড সাথে তাই মাফ পেয়ে গেলো। আমি প্রসঙ্গ ঘোরাতে চাইলাম তাই কলেজে তানভীর স্যার আসছে কিনা জিজ্ঞেস করলাম।কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস নদী কাকে যেন ইশারা দিয়ে বল্ল,এইদিকে আয়।আমার দিকে তাকিয়ে বল্ল,"ভাইয়া ঐ যে আসতেছে সে যার কথা বলেছিলাম মনে আছে? আমার বান্ধবি তূণা।" আমি তাকিয়ে দেখলাম সুন্দরী এক ললনা আমাদের দিকে আসতেছে।পাঠক এক ফাঁকে জানিয়ে রাখি আমি কিন্তু খুব লাজুক!সুন্দরী ললনার হেটে আসার স্টাইল দেখেই আমার পেটের মধ্যে গুড়গুড় করতে লাগলো।এই মেয়ের যা চেহারা তাতে এর সাথে কথা বলতেই পাঁচশ টাকা অগ্রীম দিতে হয়। আমার বারটা বাজতে আর দেরী নাই!কি করি কি করি সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে মেয়েটাও প্রায় কাছে পৌঁছে গেলো, আমিও খিচ্চা দৌড় পিছনে তাকাইনি,দৌড়ে একদম কলেজ টয়লেট এর পিছনে।ওখানে কি হয়েছিলো আমি জানিনা তবে বিকেল হতেই মোহাইমিন আমাদের বাসায় হাজির।ওর মুখের দিকে একবার তাকিয়ে আর তাকানোর সাহস হচ্ছিলোনা।থোতাটা ঠিক বাংলা পাঁচ করে আমাকে জিজ্ঞেস করলো,
"তুই দৌড়াইয়া আসলি কেন?" আমি ভয়ে ভয়ে বল্লাম, "দোস তুই তো জানস আমি মেয়েদের সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলতে পারিনা,আমার কাঁপুনি শুরু হয়!তাছাড়া ঐ মেয়েটা যা সুন্দর তাতে আমার মত আলকাতরার ওর সাথে কথা বলা সমীচীন মনে হলোনা" মোহাইমিন এবার খেকিয়ে উঠলো, আমি মাথা নিচু করে বসে আছি জানি এখন সমানে বজ্রপাত হবে।মোহাইমিন বলেই যাচ্ছে "কি?" "বলছে তুই একটা, তুই একটা বলদে মোতাহার!" আমি বড় একটা শক খেলাম।লজ্জায় আর কোন কথাই বের হলো না।মোহাইমিন চলে গেলো।আমি মন খারাপ করে বসে আছি।এমন সময় বন্ধু শাকিল এর ফোন, "কিরে তোর নাকি কাঁপেরে?" "কে বলছে তোরে?"
"হাহাহা শুনছি ব্যাটা,আমাগো নেটওয়ার্ক সারা বাংলায়।তবে তোর নামটা কিন্তু জোশ হয়েছে,বলদে মোতাহার আঁ হাহাহাহা" রাগে আমার গা গজগজ করছে!আমার আর বুঝতে বাকি রইলোনা কাজটা মোহাইমিনের।ও নিশ্চই সব বন্ধুদের ফোন করে বিষয়টা জানিয়েছে।রাগে দুঃখে আমার কান্না পাইতে লাগলো,নেহাৎ পুরুষ মানুষ দেখে চোখে পানি আসেনি।এর মধ্যে ফোন দিলো স্বপন,জুম্মান,শাহেদ,শাহরিয়া সবার ঐ একই গান "কিরে বলদে মোতাহার" অবশেষে আপায় উপায় না পেয়ে ফোনের রিংটোন ভলিউম বন্ধ করে ফোন পাশে নিয়ে ঘুমিয়ে পরলাম।মিনিট পনেরো পরে টুটুটুন শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল।হায়রে কপাল ইন্টারনেট কানেকশন অন হয়ে আছে আর এর জন্য মেসেঞ্জারে অনবরত মেসেজ আসছে!মেসেঞ্জার অন করে দেখি প্রায় ৫৪ টি মেসেজ সব মেসেজ একই ধরনের! কেউ লিখেছেন "হাই বলদে মোতাহার" কেউ লিখেছেন "কি করছেন মোতাহর সাহেব?" তার পর কল লিস্ট চেক করে দেখলাম ৭৭ টি মিসডকল।টেক্সট মেসেজ এসেছে ৯৪ টি!বুঝলাম যারা কল দিয়ে পায়নি তারাই টেক্সট পাঠিয়েছে।আমার মাথা বোঁবোঁ করছে, বিষয়টা সবার কাছে পৌঁছলো কেমন করে?এমনকি আমার ফেইসবুক ফ্রেন্ডসরাও জানে কেমন করে?ফেসবুক লগইন করে বিষয়টা বুঝতে আর দেরী হয়নি। মোহাইমিন বজ্জাতটা আমার আজকের ঘটনা নিয়ে ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছে!আমি তখন লজ্জায়, রাগে ফোপাচ্ছি। বন্ধু মহল ছাড়িয়ে ঘটনাটা বাড়াবাড়ির পর্যায় চলে গেলো। এলাকার গুড়ো থেকে বুড়ো সবাই আমাকে ঐ নামে ডাকতে লাগলো!ঘটনা এই হলো,আমি আর ঘর থেকেই বেরুচ্ছি না!মোহাইমিনের উপর প্রতিশোধ নেয়ার চাপা একটা প্রবণতা কাজ করতে লাগলো,কিন্তু কিভাবে যে নিবো সেটাই মাথায় আসতেছিলোনা।কি করা যায় ভাবতে ভাবতে শেষে একটা আইডিয়া আসলো, মোহাইমিন সেদিন কি কাজে ওর জান্নাতুল আপুদের বাড়িতে গিয়েছিলো, আর আমিও সে সু্যোগ কাজে লাগালাম।অনেকদিন পর ফেইসবুক ওপেন করে একটা স্ট্যাটাস দিয়ে বের হয়ে আসলাম।স্ট্যাটাসটি ছিলো নিম্নরুপঃ
" মোহাইমিন, জানি দোস আর ফিরবি কিনা!তবে তুই যেখানেই থাকিস ভালো থাকিস এই কামনাই করি।আল্লাহ্ তোকে জান্নাতুল ফেরদৌস আপাদের বাড়ি সহীসালামতে পৌঁছে দিক!"
ফোন রাখলাম খোলা,মিনিট যেতে না যেতেই টুনটুন করে নদীর মেসেজ, "ভাইয়া আমি বিশ্বাস করি না!" আমি তখন হাসবো না গড়াগড়ি দেবো ভেবেই পাচ্ছিনা। ওকে কোন রিপ্লাই দিলাম না।নদী অফলাইনে চলে গেলো,বুঝলাম বেশ শক খেয়েছে!পাঁচমিনিট অতিবাহিত হলো কোন মেসেজ বা ফোন আসলো না,ছয় মিনিটের মাথায় এত ফোন আসতে শুনু করলো যে আমি দিক খুঁজে পেলামনা।উঁকি দদিয়ে দেখলাম মোহাইমিনদের বাসার সামনে বড়সড় একটা জটলা!সবাই মরহুম মোহাইমিন ককে শেষ দেখা দেখতে চায়।বিশ মিনিটের মাথায় কাকে যেন দৌড়ে আমাদের বাসার দিকে আসতে দেখলাম।কাছে আসতে বুঝলাম মোহাইমিন!জান্নাত আপুদের বাড়ি থেকে আসতে কমসে কম ৩০ মিনিটের পথ,এত দীর্ঘপথ মনে হয় দৌড়েই আসছে!ওকে আসতে দেখে আমি আমার খাটের নিচে লুকালাম!মোহামিন দৌড়ে আমার রুমে ঢুকে হাপাচ্ছে আর বলছে,
"আমি জানি তুই কই,তাড়াতাড়ি স্ট্যাটাস ডিলিট কর না হয় খবর আছে তোর!" আমি মাথা বাড়িয়ে বল্লাম, "মানুষরে ইনসাল্টে করতে কেমন লাগে?"
মোহাইমিন থ মেরে চেয়ারে বসে আছে,আমার মুখেও কোন কথা নেই!আমাকে শেষ বারের মত স্ট্যাটাসটা ডিলিট করতে বলে ও চলে গেলো,সেই যে চলে গেল আমার সাথে একমাস আর দেখা করেনি,হয়নি কোন কথাও!একমাস পরে এলাকার খেলার মাঠে দেখলাম মোহাইমিন কাকে যেনন কান ধরে ওঠবস করাচ্ছে।পাশের একজনের কাছে কারণ কি জিজ্ঞেস করতে বল্ল,এই ছেলেটা নাকি ওকে মরহুম মোহাইমিন বলেছে।আমাকে দেখেই ও মুখ ঝামটা দিয়ে সড়ে পরলো।আমি হাসতে হাসতে বাসার দিকে চলে আসলাম।
SHARE

Mad Max

  • Image
  • Image
  • Image
  • Image
  • Image

0 comments:

Post a Comment