"রোহিঙ্গা প্রলেতারিয়াত'' ইস্যু ও বাংলাদেশ এর বৌদ্ধ সম্প্রদায়


বাংলাদেশে বিদ্যমান বৌদ্ধদের বিরুদ্ধে ঘৃণাবাদ ছড়াচ্ছে কারা?

বৌদ্ধরা এখন ঘুমাতে পারছেনা সাম্প্রদায়িক হামলার ভয়ে এ দায় কাদের?
এমনিতেই বৌদ্ধরা "সাম্প্রদায়িক হামলা হতে পারে' আঁচ করতে পেরে মানববন্ধন করতেছে সেইটা ঠিকআছে। একটা গ্রুপ মুসলমান সমাজকে উস্কে দিচ্ছে এই বলে যে "বৌদ্ধরা ভয়ে এইসব করতেছে, এমনিতে এরা মায়ানমারের বৌদ্ধদের মতোই, যুদ্ধ বাঁধলে এরা মায়ানমারের পক্ষ নিবে ইত্যাদি ইত্যাদি''।
ঘৃণাবাদ যারা ছড়াচ্ছে ওঁরা ভুলে যাচ্ছে যে ৭১ এ পাকিস্তানের সরকার মুসলমান তকমা ইউজ করা সত্ত্বেও "বাংলার মুসলমান'' সমাজের সাপোর্ট পায়নি এবং তাদের বিপক্ষে অস্ত্র ধরেছে বাঙালী মুসলমানেরাই। যদি মায়ানমারের সাথে যুদ্ধ হয় ও (তাদের যুক্তিতে) তাহলে এই রেসিস্টরা কীভাবে বুঝলো যে, বৌদ্ধরা মায়ানমারের পক্ষপাতিত্ব করবে?
কেন বৌদ্ধরা মায়ানমারের পক্ষ নেবে সে প্রশ্ন পরের, তবুও যদি নেয় ও তাহলে সে দায় আপনার রাষ্ট্রের। আপনার রাষ্ট্র তাদের আয়ত্বে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে বা তাদের যন্ত্র হিসাবে ব্যবহার করেছে।
আপনাদের মনে করিয়ে দিতে চাচ্ছি গুজরাতের দাঙ্গার কথা যেটি ১৯৯১ এর দিকে হয়েছিলো। গুজরাতের দাঙ্গার পর বাঙালী মুসলমান সম্প্রদায়ের একটি দলকে কে বা কারা হিন্দুদের মন্দির-বাড়িঘর ইত্যাদি ধ্বংসে লেলিয়ে দিলো। আহমদ ছফার "সাম্প্রতিক বিবেচনাঃ বুদ্ধিবৃত্তির নতুন বিন্যাস'' এ আমি যখন ঐ সময়কার হিন্দুদের অবস্থা পড়লাম আমি শিহরিত হলাম! শয়ে শয়ে মন্দির ভাঙা হলো, বাড়িঘর পোড়ানো হলো। কিন্তু আদৌ গুজরাতের মুসলমানদের কোন উপকার হলো না বরংচ তাঁরা এখনো নির্যাতিত হচ্ছে ভারতে। উপরন্তু স্বদেশী হিন্দুদের সাথে মুসলমানদের একটা দূরত্ব সৃষ্টি হলো! সাম্প্রদায়িক হিসাবে বাংলাদেশ ও পরিচিতি পেলো ভারতের পাশাপাশি।
এত কথা বলার মানে এই যে, আপনাকে মনে করিয়ে দিতে চাই "শুধুমাত্র রোহিঙ্গা নয় সিটিজেন মুসলমান ও বার্মায় আছে''। আপনি যদি রোহিঙ্গা ইস্যুতে বৌদ্ধদের হামলা করে বা ঘৃণাবাদ ছড়িয়ে মুসলমান-বৌদ্ধদের দূরত্ব সৃষ্টি করেন তা দ্বারা রোহিঙ্গা মুসলমানদের কোন উপকার হবেনা। বরংচ বার্মায় বসবাসরত অন্যান্য মুসলমান সম্প্রদায়ের ও ক্ষতি হবে। তাঁরাও সাম্প্রদায়িক হামলার স্বীকার হতে পারে। তারচে এই'ই ভালো নয় কী, স্বদেশী বৌদ্ধরাও এই গণহত্যার বিপক্ষে মানববন্ধন করুক, পৃথিবী দেখুক যে "বার্মার বৌদ্ধরা এতটাই নিচ যে তাদের একই ধর্মের লোকরাই তাদের বিপক্ষে ব্যানার হাতে নেমেছে''?
সর্বোপরি অন্য রাষ্ট্রের ইস্যু টেনে নিজ রাষ্ট্রে বসবাসরত কোন সম্প্রদায়ের প্রতি ঘৃণাবাদ ছড়ানো এক প্রকার ফ্যাসিজম! এমন সঙ্কটাবস্থায় সংগ্রাম নিজদেশের অসহায় সম্প্রদায়ের সাথে নয়, সংগ্রাম করতে হবে শত্রু শ্রেণীর সাথে। "রোহিঙ্গা প্রলেতারিয়াত'' ইস্যুতে আমাদের শত্রু পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসরত বৌদ্ধরা নয়, আমাদের শত্রু বরংচ মায়ানমারে যারা রোহিঙ্গাদের প্রতি বর্বরতা প্রদর্শন করেছে তাঁরা।
SHARE

Mad Max

  • Image
  • Image
  • Image
  • Image
  • Image

0 comments:

Post a Comment